মীর ফয়সাল বিপ্লব ।।
সিনেমা হলে গিয়ে কেন সিনেমা দেখি? নানা উৎপীড়নে ব্যতিব্যস্ত জীবন থেকে নিজেকে আড়াল করতেই যে নাটক-সিনেমার কাছে যাই, ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। আবার সিনেমাবেত্তা হওয়ার গোপন ইচ্ছাও নেই। আসলে চারপাশ থেকে সিটির ধ্বনি আসছে, কোলাহল, দর্শকের চিৎকার—সিনেমা হলের এ ব্যাপারগুলো আমাকে ভীষণভাবে রোমাঞ্চিত করে। ‘তুফান’ দেখার ইচ্ছাটা জন্মেছিল ‘লাগে উরাধুরা’ গানটি দেখে।
সিনেমা দেখার পর ভালো অনুভব করেছি। কেবল ‘লাগে উরাধুরা’ নয়, ‘তুফান’-এর প্রত্যেকটি গানই চিত্তাকর্ষক। ‘দুষ্টু কোকিল’ গানটি যখন চলছিল, ওই মুহূর্তে হলে উপস্থিত দর্শকদের যে কলরব, উল্লাস; যে আবহ তৈরি হয়েছিল, তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।
‘তুফান’ রায়হান রাফীর ছবিটি দেখার পর মনে মনে গর্ববোধ করেছি যে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের ছবির নির্মাণ শুরু হলো। পরিচালক এই ছবিতে নিজের মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। বাইরের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত কেউই এ কথা অস্বীকার করবেন না। তদুপরি দৃশ্যগুলোর বুনন এত ভালো যে ভিনদেশি কোনো মুভি দেখছি বলে ভ্রম হলেও বিষয়টা দোষের হবে না।
শাকিব খান চমৎকারভাবে ‘তুফান’ চরিত্রটিকে ধারণ করেছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি থেকে প্রতিটি দৃশ্যায়নে মুহুর্মুহু ‘তুফানি’ জোশ ফুটে উঠেছে তাঁর অভিনয়ে।
নাবিলা, যাঁর সাবলীল বাচনভঙ্গি, মায়াময় চাহনি দেখে আনন্দিত হয়েছি। নাবিলা এত সহজ-সুন্দর, স্বাভাবিক ছিলেন যে তাঁর অভিনয় ক্রমে ক্রমে বাস্তব হয়ে উঠেছে। ফজলুর রহমান বাবু, মিশা সওদাগর প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ ও গুণী শিল্পী। তাঁদের অভিনয়ে প্রাণ ছিল। দেখে ভালো লেগেছে।
এবার আসি ছবির বিশেষ আকর্ষণে। চঞ্চল চৌধুরী, তাঁর অভিনীত নাটকগুলোতে তিনি যে অসাধারণ অভিনেতা তা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। আবার তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছি চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে। নাটক, সিনেমায় সচরাচর যে চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে অভ্যস্ত, তিনি ভিন্নভাবে ‘তুফান’-এ উপস্থাপিত হয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, যে দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরীর আবির্ভাব, ওই দৃশ্য থেকেই গল্পের প্রতি আকর্ষণ বহুগুণে বেড়েছে। গুণী এ অভিনেতার চরিত্রটিই এমন যে সিনেমা দেখার পর মনে হয়েছে এই চঞ্চল চৌধুরী অন্য রকম। নিজেকে অন্য রকমভাবে উপস্থাপন করতেই যেন তিনি চরিত্রটিকে আপন করে নিয়েছেন।
মিমি চক্রবর্তী জনপ্রিয় শিল্পী। তাঁর অভিনয় দুই বাংলার দর্শকই উপভোগ করেন। এ সিনেমাতেও তাঁর অভিনয়ের সাবলীলতা দেখা গেছে।
গান, অভিনয়, সাউন্ড, চরিত্রের লুক, সেট ডিজাইন—সব মিলিয়ে ‘তুফান’-এর নির্মাণ অনবদ্য। তারপরও সব তো আর নিখুঁত হয় না। সিনেমার মতো সৃষ্টিশীল বিষয়েও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে সিনেমাটি হলে বসে দেখে তুমুল আনন্দ পেয়েছি। বেশি ভালো লাগা তৈরি হলে আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকে। হয়তো সে কারণেই মনে হয়েছে, গল্পকে নির্মাতা যেভাবে এক সুতায় গেঁথেছেন, সেটা আরও একটু সহজ হলে বোধ হয় ভালো হতো।
একটা অ্যাকশন দৃশ্য ননকাটে পুরো অ্যাকশন কমপ্লিট করেছে ‘তুফান’ ছবির টিম। আমরা এসব অ্যাকশন দৃশ্য হলিউড সিনেমাতে সচরাচর দেখে থাকি। হিন্দি, তামিল, তেলেগু সিনেমাতেও দেখা মিলে। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে এক্সট্রাকশন ২ মুভিতে পুরো একটি অ্যাকশন সিন ননকাটে কমপ্লিট করা হয়েছে। এই ধরনের দৃশ্য আমাদের বাংলা সিনেমায় সত্যিই গর্ব করার মতো।
তবে এটা সত্যি, হলে বসে আনন্দ নিয়ে দেখার ক্ষেত্রে ‘তুফান’-এর জুরি নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেই হলমাতানো অ্যাকশন ছবি নির্মাণ শুরু হয়েছে—এ কারণে আমরা গর্ব করতেই পারি।
আমি যদিও মুভি ক্রিটিক নই, তবে আমি বলব এইরকম সিনেমা আরও বানানো হোক। শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে যেই কাদা মাখামাখি দেখি, সেটার থেকে এইসব সিনেমা বানানো সময় দিলে আমার মনে হয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লাভ হবে। ৫ স্টার-মিস্টার আমি বুঝি না। ছবি পয়সা উসুল, বিনোদনদায়ক।