শুক্রবার, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫

আইডিয়ালের ৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ

গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতির সময় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৮৯ জন শিক্ষককে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ করা হয়েছে

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
আইডিয়ালের ৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ

বিদ্যাপীঠ ডেস্ক।।

রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত তিন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) ২০২২ সালের এপ্রিল ও জুন মাসে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করে এই তথ্য পেয়েছে। এই অবৈধ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ সরকারি কোষাগারে এবং নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের গ্রহণ করা বেতনভাতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ১৬ অক্টোবর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ডিআইএ। যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার, শিক্ষা পরিদর্শক মো. মুকিব মিয়া, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক সাদিয়া সুলতানা এবং অডিট অফিসার চন্দন কুমার দেব প্রতিবেদন তৈরি করেন।

জানতে চাইলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বাংলা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ১৬ অক্টোবর প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা এমপিওভুক্ত তাদের নেওয়া বেতন-ভাতার সরকারি অংশ সরকারি কোষাগারে এবং যেসব শিক্ষক-কর্মচারী নন-এমপিও তাদের নেওয়া বেতন-ভাতার সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ফান্ডে জমা করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ পাওয়া জাল সনদ নিবন্ধন না থাকা শিক্ষকরা আত্মপক্ষ সমর্থনে মন্ত্রণালয়ে শুনানি চাইতে পারেন। এরপর মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেবে।’

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিদর্শন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি। তাতে পেলে প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কয়েক দফায় নিয়োগ দেওয়া হয় এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের। এর মধ্যে ২০১১ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯৯ জন, ২০১৩ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৪৮ জন। গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতির সময় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিভিন্ন ব্রাঞ্চে নিয়োগ দেওয়া হয় ৮৯ জন। এছাড়া ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বনশ্রীতে ৬৯ জন এবং ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালে মুগদা শাখায় ৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।

 

নিয়োগে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ১১১ জন শিক্ষক ও একজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে। এসব শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৯৯ জন। বিভিন্ন ব্রাঞ্চে অস্থায়ীভিত্তিতে ৫৯ জন এবং ৪ জন ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির বাইরে অতিরিক্ত ৪২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয় জাতীয় বেতন স্কেলে। প্রতিবেদনে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৯৯ জন শিক্ষককে দেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪২ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়, রেজুলেশনে ৯৪ জন শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয় ১৪২ জন ও তিন জন কর্মচারীসহ মোট ১৪৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হয় ৫১ জন শিক্ষক-কর্মচারী।

বিধি মোতাবেক পদের নাম ও সংখ্যা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা কিন্তু তা করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে আরও বলা হয়, আর কর্মচারী নিয়োগে গভর্নিং বডির কোনও সিদ্ধান্তই ছিল না। ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নে কোনও পত্র জারি করা হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৩ মার্চ। ফলাফল শিটে প্রার্থীদের নিবন্ধন ও ইনডেক্স নম্বর লেখা নেই। ফলে সকল প্রার্থীর নিবন্ধন ও ইনডেক্স ছিল কিনা তা জানা যায়নি। বিধি অনুযায়ী ১৪৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বৈধ না হওয়ায় বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতির সময় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৮৯ জন শিক্ষককে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক সরবরাহ করা শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ রেকর্ড যাচাই কারে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বরের মন্ত্রণালয়েরে পরিপত্র মানা হয়নি। যা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে। এসব শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত নন, তবে প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের বেতন ভাতা দেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষক কর্মচারীদের অর্থ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে বনশ্রীতে ৬৯ জন এবং ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালে মুগদা শাখায় ৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র না মেনে এসব শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

 

আরও পড়ুনঃ আবুরখীল অমিতাভ উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net