৫৭
শামীম আরেফীন ।।
চালভাঙা ঘরে বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ার মতো তখন দুঃখ আমাদের কাঁচা জীবনে ঢুকে পড়তে শুরু করে। আমাদের বাউণ্ডুলে বিকেলগুলো উদাস হতে হতে সন্ধ্যা পেরোয়। তারপর অন্ধকার। আমাদের চোখগুলো তখন হারানোর ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে। ঠিক তখনই, কেউ একজন পরম বন্ধুর মতো আমাদের সাহস শোনায়—
“যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে, এ হৃদয়ে, সে কিছু নয়
শত আঘাতেও নিঃস্ব যে আজ, তার আবার হারানোর ভয়।”
আমরা তখন হারানোর ভয় মুছে হিমালয় সম দুঃখগুলো দু’হাতে সরিয়ে বড় হতে শিখে যাই।
তারপর উঠোন পেরিয়ে আমরা বাইরের পৃথিবীতে যখন পা বাড়াই, প্রিয় মুখগুলো খামছে ধরে আমাদের বুকের পাঁজর। দু’হাত মেলে সামনে এসে দাঁড়ায় পিছুটান। আমরা আবার বিপাকে পড়ি। চোখ ভেঙে আসে জলে। তখন আমাদের সেই দরদী আবার গেয়ে ওঠে –
“যাবার বেলায় শুধু সান্ত্বনা নয় কান্না
আবার দেখা হবে এখনি শেষ দেখা নয়
আবার কথা হবে এখনি শেষ কথা নয়।”
ঘর ছেড়ে এসে আমাদের দেখা হয় আকাশলীনার সাথে। আমরা আহত বুক পেতে দিই সেই আকাশের নিচে। ভালোবাসার প্রথম হাওয়ায় আমরা ঘাসফড়িঙের মতো উড়তে থাকি। আকাশলীনাকে পাওয়া না-পাওয়ার দোলায় আমাদের মনে বাজতে থাকে হাজার জিজ্ঞাসা। প্রিয় শিল্পীর ভাষায় এভাবে ঝরে পড়ে তা—
“আকাশনীলা তুমি বলো কীভাবে
আমার শূন্য মনে সুখ ছড়াবে
এমন করে কি তবে ভেবেছো আগে
ভালবাসা দিয়ে শুধু ভুল ভাঙাবে!
কথা দাও কথা দাও কথা দাও বুঝবে আমায়
কথা দাও কথা দাও আজীবন আমারি রবে।”
কিন্তু আকাশনীলা আমাদের জীবনে বেশিদিন রয় না। একদিন হারিয়ে যায় কালো মেঘের আড়ালে। আমরা আর তাকে হৃদয়ের পথে ফেরাতে পারি না। ভাঙামনের পাশে বসে তখন সেই গিটারবাদক আমাদের দুঃখগুলো গাইতে থাকে—
“কোনো কারণে, কোনো কারণেই
ফেরানো গেলো না তাকে
ফেরানো গেলো না কিছুতেই
সে যে হৃদয়-পথের রোদে
একরাশ মেঘ ছড়িয়ে
হারিয়ে গেল নিমিষেই।”
প্রিয় খালিদ ভাই, আমাদের জীবনের গল্পগুলোর পাশে বন্ধুর মতো এভাবে সুর ছড়িয়ে থাকার জন্য আপনাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই। আকাশলীনার মতো আপনাকেও ফেরানো গেলো না আর। আমাদের হৃদয়-পথ জুড়ে আপনার গান চিরদিন বাজতে থাকবে ভালোবাসায়। ভালো থাকুন না ফেরার জগতে।
লেখক : কবি ও চিত্রশিল্পী