স্টাফ রিপোর্টার ।।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় আরও অনেকেই গ্রেপ্তার হতে পারেন। তদন্ত শেষে তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আজ সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
আনোয়ারুল খুনের ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয়জন। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবু। তাঁর গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও অনেকের গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দেন।
গত ১৩ মে কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের ঘটনায় কাজী কামালের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজতে সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। আনোয়ারুল খুনের পরে কাজী কামালের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন এই খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়া। শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদে কামাল ছাড়াও ঝিনাইদহের আরও এক আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আনোয়ারুল খুনে কাজী কামালের কী ধরনের সম্পৃক্ততা রয়েছে সাংবাদিকেরা এ বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। খুনের তদন্ত সম্পর্কে মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গেছি। মরদেহটি শনাক্ত হলেই অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারব।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাঁরা বলেছে, মরদেহটি খণ্ডবিখণ্ড করা হয়েছে। তবে এগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে প্রথমে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। পরে কিছু টুকরা উদ্ধার হয়। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না এগুলো সংসদ সদস্যের কি না।
আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন এখন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে খবর রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনোয়ারুল খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে (কলকাতায়) একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই দেশই সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এখানকার অংশটুকুর বিচার হবে। হত্যাকাণ্ড হয়েছে ভারতে, সেখানে সেই দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দেশে (ভারতে) যেহেতু ঘটনা ঘটেছে এ কারণে তাদের আসামিকে ফেরত আনার দায়িত্ব তাদের। আমি যতটুকু জানি ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে। সে ক্ষেত্রে সেই সুবিধাটা হয়তো ভারত সরকার পাবে। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন চুক্তি নেই। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের সব কাজেই তারা সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতে করবে।’
সংসদ সদস্যের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘খণ্ডবিখণ্ড অংশ (কলকাতায় উদ্ধার হওয়া) আনোয়ারুল আজীমের কি না, এটা নিশ্চিত করতে একটি প্রমাণ তো দরকার হবে। সে জন্যই ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে। সংসদ সদস্যের কন্যার সঙ্গে ডিএনএ মেলে কিনা সেটা দেখে ভারতের পুলিশ আমাদের জানাবে।’
সেপটিক ট্যাংকে পাওয়া টুকরাগুলো মানবদেহের
আনোয়ারুল আজীম খুন হন কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তদন্ত দল কলকাতায় যাওয়ার পর এই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করা হয়। কলকাতার গণমাধ্যমের খবর বলছে, সেখানকার সিআইডি ওই টুকরাগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পচে যাওয়া ওই মাংসের টুকরাগুলো মানবদেহের।