একদিনের ব্যবধানে আবারও অঘটন ঘটলো চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে। টানা দুই ম্যাচে দাপুটে জয়ে উড়ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু আজ নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এসে আসরের প্রথম হার দেখতে হলো তাদের। প্রোটিয়াদের ৩৮ রানে হারিয়ে মাটিতে নামালো নেদারল্যান্ডস। এর আগে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল ডাচরা।
টসের পর বৃষ্টিতে খেলা শুরু হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে, তাতে কাটা যায় ৭ ওভার। অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডের দুর্দান্ত ৭৮ রানের উপর ভর করে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান করে নেদারল্যান্ডস। জবাবে ১ বল বাকি থাকতে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা।
বিশ্বকাপের শুরুটা স্বপ্নের মতো করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দারুণ ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়াকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে একটিতে তো স্কোর ছিল চারশত ছাড়ানো! সেই দলটাকেই দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ২০১১ বিশ্বকাপের পর বড় আসরে খেলতে আসা ডাচ দলটি অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে প্রোটিয়াদের ৩৮ রানে হারিয়েছে। তাতে ওয়ানডে বিশ্বকাপটা আরও জমিয়ে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস।
শেষের ব্যাটিং আর দারুণ বোলিংয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে কমলা শিবির। এর ফলে আফগানিস্তানের পর টুর্নামেন্টের অন্যতম অঘটনের জন্ম দিয়েছে তারা। এই ডাচদের কাছে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রোটিয়া দল অঘটনের শিকার হয়েছিল। যা ছিল যেকোনও ফরম্যাটে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ডাচদের প্রথম জয়। মঙ্গলবারও এমনটা হবে তা কে ভেবেছিল? গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে ডাচ দল শেষের ব্যাটিংয়েই সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।
লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিংয়ে শুরুতেই স্কোরটা চ্যালেঞ্জিং করে ছাড়ে নেদারল্যান্ডস। তবে যে দলটা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়েছে তাদের কাছে এই স্কোর চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কথা নয়! কিন্তু চোকার্স তকমায় প্রতিষ্ঠিত দলটা শুরুতেই চাপের কাছে ভেঙে পড়ে বাজে ব্যাটিংয়ে! যাদের ব্যাটে বারুদ আশা করা হচ্ছিল সেই কুইন্টন ডি কক (২০), তেম্বা বাভুমা (১৬) ও এইডেন মারক্রামরা (১) ডাচ বোলিংয়ে একে একে সাজঘরে ফিরেছেন ১১ ওভারের মধ্যে। তার পর ৮৯ রানে ৫ উইকেট হারালে ম্যাচটার গতিপথ প্রায় নির্ধারিত হয়ে যায় তখনই। ডেভিড মিলার শুধু ব্যর্থ লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন। ৫২ বলে ৪৩ রানে আউট হওয়ার পর প্রোটিয়াদের হারটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। কিন্তু কেশব মহারাজ কিছুক্ষণ লড়াই করে হারের ব্যবধান কমাতে অবদান রেখেছেন। ৪২.৫ ওভারে ৪০ রানে তার আউট হতেই ২০৭ রানে শেষ হয়েছে প্রোটিয়াদের ইনিংস।
রোয়েলফ ফন ডার মারইউ কিন্তু এক সময় প্রোটিয়া দলেই খেলেছেন। এই বামহাতি স্পিনার বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডুসেনের উইকেট নিয়ে ধস নামাতে অবদান রেখেছেন। ৩৪ রানে তিনি নিয়েছেন দুটি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন লোগান ফন বিক, পল ফন মিকারেন ও বাস ডি লিডও। একটি নিয়েছেন কলিন অ্যাকারম্যান।
বিশ্বকাপে ছোট দলগুলোকে অবহেলা করলে কী হতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ হয়ে থাকলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বোলিংয়ে ১১২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে একটা পর্যায়ে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল নেদারল্যান্ডস। সেখান থেকে ডাচ দলটি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৮ উইকেটে পেয়েছে ২৪৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। শেষের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ড ফুলে ফেঁপে ওঠে মূলত ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের ব্যাটিং বীরত্বে। ৬৯ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় তার ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংসেই দিশা পেয়েছে নেদারল্যান্ডসের ইনিংস। ম্যাচসেরাও হন তিনি।
বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা কমে দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে প্রোটিয়া বোলিংয়ে পুরোপুরি খেই হারায় নেদারল্যান্ডসের ইনিংস। এরপর পাল্টা আক্রমণে লোয়ার অর্ডারের অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শনীতে ঘুরে দাঁড়ায় তারা।
শুরুতে ব্যাটিং অর্ডার ধসাতে পারলেও প্রোটিয়ারা পরের দিকে সেভাবে কোনও পরীক্ষাই নিতে পারেনি। ৫৭ রানে দুটি উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিদি। ২৭ রানে দুটি নিয়েছেন মার্কো ইয়ানসেন। ৫৬ রানে সমসংখ্যক উইকেট নেন কাগিসো রাবাদাও। একটি করে নিয়েছেন জেরাল্ড কোয়েটজে ও কেশব মহারাজ।
আরও পড়ুনঃ শ্রীলঙ্কার অপেক্ষা বাড়িয়ে ‘প্রথম’ জয় অস্ট্রেলিয়ার