বাণিজ্য ডেস্ক।।
গাছ, মাছ, গবাদিপশু, সোনা, রুপা, গাড়ি, আসবাবপত্রের মতো অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। এ ধরনের বিধান রেখে ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) বিল–২০২৩’ বিল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
বিলটির কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, অস্থাবর সম্পত্তি দিয়ে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি দিয়ে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ঋণগ্রহণকারীরাই অস্থাবর সম্পত্তি দিয়ে ঋণ নেবে। আইনটির মাধ্যমে নতুন করে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। পরে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় শুধু স্থাবর সম্পত্তি (বাড়ি, জমি) জামানত রেখে ঋণ নেওয়া যায়। আইনটি কার্যকর হলে অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখেও ঋণ নেওয়া যাবে।
যা কিছু জামানত রাখা যাবে
বিলে জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে রফতানির উদ্দেশ্যে অথবা রফতানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতের সনদ। স্বর্ণ, রৌপ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, যার ওজন ও বিশুদ্ধতার মান স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সত্যায়িত। নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সনদ। স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য। বিধিতে নির্ধারিত মৎস্য, গবাদিপশু, দণ্ডায়মান বৃক্ষ ও শস্যাদি, ফলদ উদ্ভিদ ও ঔষধি উদ্ভিদ। আসবাব, ইলেকট্রনিক পণ্য, সফটওয়্যার ও অ্যাপস, যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব।
আরও আছে কোনও সেবার প্রতিশ্রুতি, যার বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন। যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণী, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিলে বর্ণিত রক্ষিত বন্যপ্রাণী ও উভচর ছাড়া কোনও আয়বর্ধক জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ)।
সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টিকারী যেকোনও ধরনের চুক্তি, বন্ধক, শর্ত সাপেক্ষে বিক্রয়, ডিবেঞ্চার, কিস্তিতে ক্রয় চুক্তি। বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত এক বছরের অধিক মেয়াদি কোনও ইজারা। সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত কোনও মোটরযান। কোনও বার্ষিক ভাতা বা বিমা পলিসির অধীন সৃষ্ট কোনও স্বার্থ বা দাবি এবং জামানতের কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা লোকসান থেকে উদ্ভূত ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা হিসেবে কোনও বিমা পলিসির অধীন প্রাপ্য অর্থ বা অন্য কোনও আর্থিক অধিকার।
যারা ঋণ দিতে পারবে
বিলে বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালতে সংজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা আইন অনুযায়ী বিমাকারী, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইনে সংজ্ঞায়িত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং মানি ল্যান্ডার্স অ্যাক্টে সংজ্ঞায়িত মানি ল্যান্ডার এবং বিদ্যমান অন্য কোনও আইনে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে লেনদেন করতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জামানত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হবে।
আইন কার্যকর হলে সরকার একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে। এই কর্তৃপক্ষ জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি অর্থায়ন বিবরণী নিবন্ধন, জামানত হিসেবে অস্থাবর সম্পত্তির ইলেকট্রনিক নিবন্ধনসংক্রান্ত ইলেকট্রনিক তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করবে।
আরও পড়ুনঃ ৯ মাসে গ্রামীণফোনের মুনাফা ২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা