স্টাফ রিপোর্টার ।।
দেশের বাজারে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে আছে নকল মোবাইল ফোন। শুধু একটি IMEI (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর ব্যবহার করে অন্তত দেড় লাখ মোবাইল ফোন বাজারে ছাড়া হয়েছে এবং তা নিয়মিত ব্যবহারও হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এক সেমিনারে মোবাইল ডাটাবেইজের উপাত্ত তুলে ধরে এমনটাই জানান টেলিকম অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
টেলিকম বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবির আয়োজনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদফতরে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টি (আইএমইআই) একটি আসল ফোনের মোবাইল ফোনের পরিচয় বহন করে। প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের জন্য আলাদা একটি আইএমইআই নম্বর থাকে। দুটি সিম সংযুক্ত হয়, এমন মোবাইলে দুটি আইএমইআই নম্বর থাকে।
শাহেদ আলম বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে এখন পাঁচটি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। এ ফোনগুলোর নকলও বাজারে পাওয়া যায়। এসব একাধিক নকল মোবাইল ফোনের বিপরীতে একটি আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করা হয়। বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, একটি আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার হ্যান্ডসেটে।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর না হওয়া এবং গ্রে-মার্কেটের কারণে আমাদের জন্য একটি মোবাইল ডিভাইস লকিং গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই গাইডলাইন কোনও কাজে আসছে না। কেননা এর শর্তগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক। সেটে থাকা দুটি সিম স্লটের মধ্যে একটি বন্ধ রেখে আরেকটা চালু রাখার ক্ষেত্রে এটা কাজ করছে না।
ভুয়া আইএমইআই নম্বর ব্যবহারের তথ্যটি শুনে অবাক হন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় তিনি সেমিনারে উপস্থিত পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, এ নিয়ে যখন অভিযান করি, তখন দেখি আপনাদের মতো এমন অফিস বানিয়ে তারা ব্যবসা করছে এবং হ্যান্ডসেট বানাচ্ছে। এক অভিযানে ৭০০ মোবাইল উদ্ধার করি। চীনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ এনে তারা এ মোবাইলগুলো বানাচ্ছে। দুই-তিন মাস চালানোর পর তা নষ্ট হয়ে যায়। এটা শুধু মোবাইল নয়, গাড়ির ক্ষেত্রেও এমনটা দেখেছি। এক নম্বর দিয়ে ২৯টা গাড়ি চলছে।
সেমিনার থেকে জানানো হয়, নিবন্ধন জটিলতার কারণে বাংলাদেশে এনইআইআর বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। অথচ মোবাইল অ্যাডাপশন ৪০ শতাংশ বাড়লে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ৬৭ শতাংশ মোবাইল ব্রডব্যান্ড অ্যাডাপশন হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১২ শতাংশ।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মোবাইল উৎপাদনকারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সাহস করে মোবাইল উৎপাদনে এগিয়ে আসেন। গার্মেন্টস শিল্পের মতো চাইলে দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও আমরা রফতানি করতে পারি। আমাদের দক্ষ জনবল আছে। চীন যেমন বিশ্ববাজারে অংশীদার হয়েছে, আমরাও হতে পারবো। বলছি না এখনই বাজার ধরে ফেলবো। তবে এগিয়ে যেতে থাকি। আপনাদের লাভ হলে দেশেরও রাজস্ব বাড়বে, দেশও লাভবান হবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোর নতুন সংগঠন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ, সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক, এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার প্রমুখ।