স্টাফ রিপোর্টার ।।
কাঠগড়ায় উঠে অঝোরে কাঁদলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে আট দিনের রিমান্ডের আদেশপ্রাপ্ত সেলেস্তি রহমান। তাকেসহ তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত এ আদেশ দেন।
রিমান্ডের আদেশপ্রাপ্ত বাকি দুই আসামি হলেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
রিমান্ড শুনানির আগে কাঠগড়ায় উঠেই অঝোরে কান্না শুরু করেন সেলেস্তি রহমান। রিমান্ড শুনানির একপর্যায়ে একজন আইনজীবী ওকালতনামায় সেলেস্তি রহমানের স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি সেই আইনজীবীকে বলেন, ‘আমি কেন স্বাক্ষর করব? আমি কি আসামি নাকি? এসব বিষয়ে কিছু জানি না।’
এর আগে আদালতে তোলার সময় দেখা যায়, সেলেস্তি রহমান দুই নারী পুলিশের কাঁধে মুখ লুকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আদালতে যান। এসময় তিনি মুখে মাস্ক পরে ছিলেন।
তারও আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এ সময় তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, সেলেস্তি রহমান এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিনের বান্ধবী।
কলকাতা পুলিশও ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, গত ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে একসঙ্গে তিনজন ঢোকেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। একদিন ফ্ল্যাটে অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই সেলেস্তি। ১৩ মে তিনি আমানউল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সূত্র বলছে, তাদেরও ধারণা ওই নারীই সেলেস্তি। কারণ তিনি ১৫ মে বিমানে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন মূল ঘাতক আমানউল্লাহ।
সূত্রটি আরও জানায়, ধারণা করা হচ্ছে এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এ নারীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন। কারণ সব পরিকল্পনা করে শাহীন ১০ মে দেশে ফিরে এলেও সেলেস্তি থেকে যান কলকাতায়।
ডিএমপি ডিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের সময়ে সেলেস্তি তিনতলা ফ্ল্যাটের একটি তলায় অবস্থান করছিলেন। তবে সামনে ছিলেন না। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর তিনি নিচে নেমে আসেন। ওই নারী সেলেস্তি কি না, তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।
ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মণ্ডল পাড়া লেনের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন আনার। গোপাল বিশ্বাস তার দীর্ঘদিনের পরিচিত। মূলত ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান আনার। পরদিন ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হন এই সংসদ সদস্য। সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে ১৮ মে বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ করেন গোপাল বিশ্বাস।
গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাট থেকে রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। এই ফ্ল্যাটেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা তাদের।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। পরিকল্পিতভাবে খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেছেন তিনি। এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী ওরফে সাজি ও সেলেস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন জিহাদ নামের আরেক জন।