ঢাকাবার্তা ডেস্ক।।
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হজরত খানজাহান (র.)–এর মাজারের দিঘির দুটি কুমিরের মধ্যে একটি মারা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পুরুষ (বড়) কুমিরটি মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও মাজারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। বিকেল ৫টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় দিঘি থেকে মৃত কুমিরটি উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলছিল।
বাগেরহাট জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা মনোহর চন্দ্র মণ্ডল বলেন, কুমিরটির মৃত্যুর কারণ জানতে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে।
এদিকে কুমিরের মৃত্যু নিয়ে এরই মধ্যে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। তাঁদের দাবি, চেতনানাশক ও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দীর্ঘদিন কুমিরটিকে একটি পাড়ে আটকে রাখা হয়েছিল।
মাজার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারত থেকে কুমিরটি এনে দিঘিতে ছাড়া হয়েছিল। কথিত আছে, খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে নিজের শাসনামলে হজরত খানজাহান এই দিঘিতে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলা পাহাড়’ নামে দুটি কুমির ছাড়েন। সেই থেকে কুমির এই মাজারের ঐতিহ্য। এখানকার কুমির দেখতে দেশ-বিদেশের হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করেন। ২০১৫ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি দিঘির শতবর্ষী কুমিরের শেষ বংশধর ‘ধলা পাহাড়’ মারা যায়। এর পর থেকে ভারত থেকে আনা দুটি কুমির ছিল এখানে।
মাজারের দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কুমির নিয়ে ব্যবসা চলে। দিঘির পাড়ের অংশে বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট পুকুর করা হয়েছে। মাজারের কিছু খাদেম এসব করেছেন। এসব ছোট পুকুরে কুমির এনে আটকে রাখা হয়। দর্শনার্থীরা কুমির দেখতে এলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। এ জন্য এক ঘাটে কুমিরকে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ, চেতনানাশকসহ নানা ধরনের উপকরণ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। কুমিরটি মোস্তফা ফকিরের বাড়িতে করা পুকুরে মারা যায়। পরে কুমিরটিকে টেনে দিঘির মধ্যে নেওয়া হয়।’
স্থানীয় এক খাদেম অভিযোগ করেন, এখানে কুমিরকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে বশ করা হয়। শেষ পাঁচ ছয় মাস ধরে এই কুমির দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের এফ এম মোস্তফা ফকিরের বাড়ির পুকুরে ছিল। দীর্ঘদিন কুমির এক জায়গায় থাকে না। ওষুধ দিয়ে তারা ব্যবসার জন্য কুমির আটকে রেখেছিল।
মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলেন, কুমির আটকে রেখে মানুষের কাছ থেকে পয়সা নেওয়া হতো। এত দিন ধরে কুমির এক জায়গায় থাকে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁরা অভিযোগও করেছেন। আসলে কুমিরটি মেরে ফেলা হয়েছে। তিনিও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার চান।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে এসেছেন। এখানে ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা দুটি কুমির ছিল। পুরুষ কুমিরটি মারা গেছে। কুমিরের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
আরও পড়ুনঃ মেধাহীনরা পার্লামেন্টেও যাচ্ছে, দেশও পরিচালনা করছে: তথ্যমন্ত্রী