সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

গত ১৫ বছরে টিসিবিকে ধ্বংস করা হয়েছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “১২ হাজার কোটি টাকার অপারেশন পরিচালনা করছে মাত্র ১৪২ জন কর্মী

by ঢাকাবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত ১৫ বছরে ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “১২ হাজার কোটি টাকার অপারেশন পরিচালনা করছে মাত্র ১৪২ জন কর্মী। অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী টিসিবির সঙ্গে কাজ করেন। আমি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানাই, আপনারা টিসিবির সঙ্গে ব্যবসা করুন।”

রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক এক নীতিসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এক কোটি পরিবারের জন্য চালু করা টিসিবির পরিবার কার্ড বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তিনি বলেন, “সাধারণ কিছু তথ্য-উপাত্ত যাচাই করলেই দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে কার্ডের সংখ্যা ৫৭ লাখে নেমে এসেছে। আরও বিশদ যাচাই করলে এটি আরও ২৫ লাখ কমে যাবে। একই বাড়ির একাধিক সদস্যের নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে, এমনকি ধনী পরিবারের হাতেও এই কার্ড গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী টিসিবির সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং এই ভুলত্রুটি সংশোধন করব।”

টিসিবির বর্তমান কাঠামো নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রির মতো একটি বড় অপারেশন মাত্র ১৪২ জন কর্মী দিয়ে চালানো হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। তাছাড়া খুব অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী টিসিবির সঙ্গে ব্যবসা করছেন, যা প্রতিযোগিতামূলক বাজার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।”

তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা টিসিবির সঙ্গে ব্যবসা করুন। এটি একক কিছু ব্যবসায়ীর হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হলে আরও ব্যবসায়ী সংযুক্ত হওয়া দরকার।”

বাজারের স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা আরও জোরদার করার ঘোষণা দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিযোগিতা কমিশনকে পুরোপুরি স্বাধীন করে দিতে চাই, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না ঘটে। মন্ত্রণালয়ের সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।”

তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট হবে না বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “ভোগ্যপণ্য আমদানিতে আগে এস আলম গ্রুপের একচেটিয়া প্রভাব ছিল। তারা অনুপস্থিত থাকার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অংশীজনদের নিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনা করেছে, ফলে কোনো বড় সংকট তৈরি হয়নি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, রমজানে বাজারে কোনো পণ্যের সংকট থাকবে না।”

তিনি আরও বলেন, “সয়াবিন তেলে ভিটামিন এ মিশ্রণ বাধ্যতামূলক থাকলেও এটি ঐচ্ছিক করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “বিগত সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতি, জিডিপি, ব্যাংকঋণের সুদের হার এবং ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছিল। এসব কর্মকাণ্ডের সামষ্টিক প্রভাব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পড়েছে।”

তিনি বলেন, “ধান সংগ্রহে সরকারি নীতি পরিবর্তন করা উচিত। আমরা সরকারি সংগ্রহ সীমিত করতে চাই এবং আমদানিনির্ভর হওয়া উচিত। এতে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকবে।”

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটা পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া দরকার। কারণ, যদি বায়তুল মোকাররমের খতিবের পালিয়ে যেতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে কী পরিমাণ ধ্বংস করা হয়েছে সব খাত।”

তিনি আরও বলেন, “হেন কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না, যা ধ্বংস করা হয়নি। সব অপরাধীর মধ্যে একটা জোট তৈরি হয়েছিল।”

শেখ বশিরউদ্দীন কর ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আমাদের নীতিগুলো ধনিক শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য হয়েছে। সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে নীতি গ্রহণ করা হয়নি। গত দেড় দশকে দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি। করজাল বাড়ানোর চেয়ে কর ন্যায্যতা ও কর সমতা তৈরি করা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সেটি বড় প্রশ্ন।”

বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি পূর্ববর্তী সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বর্তমান সরকারের জন্য সঠিক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে টিসিবির দুর্নীতি, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, করজাল এবং প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে তার বক্তব্য অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার তার এই পরামর্শগুলো বাস্তবায়নে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

 

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net