স্টাফ রিপোর্টার।।
বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি ২০ কিলোমিটার সড়কের পাশে নেই গাছ। সড়কটি সংস্কারে ৯০ দশকে লাগানো গাছগুলো কাটা হলেও নতুন করে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘ এই এলাকাজুড়ে গাছ না থাকায় তাতে পাখপাখালি যেমন বসবাস করতে পারে না, তেমনি প্রচণ্ড এ তাপপ্রবাহে পথচারীরাও আশ্রয় নিতে পারছেন না ছায়াতে। ফলে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি সড়কে গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার লাখো মানুষ বগুড়া জেলা সদরে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন এই সড়কে বিভিন্ন ধরনের কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। ১৯৯৩ সালে ২০ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে কয়েক হাজার বনজ বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এ গাছগুলো পথচারীদের ছায়া দান করে আসছিল। প্রতিটি গাছে বিভিন্ন ধরনের পাখি বসবাস করতো। সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলিতে পথচারীরা মুগ্ধ হতেন। সড়কটি সম্প্রসারণে দুবছর আগে গাছগুলো নিলাম করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশালাকার গাছগুলো কেটে নেয়। এরপর গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি গাছশূন্য হয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিন গাছ রোপণ না করায় জনগণ ছায়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পিচঢালা পথ উত্তপ্ত থাকায় পথচারীরা হাঁপিয়ে উঠছেন। বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মিজানুর রহমান, ট্রাকচালক সাঈদ আলী ও বাসচালক স্বাধীন জানান, কয়েক বছর আগে তারা এ সড়কটি দিয়ে বেশ ছায়াযুক্ত পরিবেশে যাতায়াত করতেন। সড়কের দুই পাশের গাছগুলো কেটে ফেলায় গত দুবছর ধরে তারা কাঠফাটা রোদের মধ্যে অসহ্য তাপে চলাচল করছেন।
তারা বলছেন, ‘গাছবিহীন এ সড়কটিতে দুপুরবেলায় চলাচল করতে গেলে মনে হয় কোনও উত্তপ্ত লোহার দণ্ডের ওপর দিয়ে চলাচল করছি। দুই বছর আগে বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেললেও এখনও কোনও গাছ লাগানোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।’
অটোরিকশাচালক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে আমাদের প্রতিদিন ৫-৬ বার যাতায়াত করতে হয়। গাছশূন্য সড়কে কাঠফাটা রোদের মধ্যে সারা দিন গাড়ি চালিয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।’
মোটরসাইকেলচালক কলেজছাত্র রাশেদ সুলতান বলেন, ‘তিন চাকা বা চার চাকা যানের ওপরে ছাদ থাকায় তারা রোদের উত্তাপ তেমন বুঝতে পারেন না। গাছশূন্য এ সড়কে আমরা রোদে পুড়ে চলাচল করছি।’
পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক মু. আহসান হাবিব বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে বগুড়ার যেসব সড়কে গাছ নেই সেখানে অতি দ্রুত আমাদের গাছ লাগানো উচিত।’ গাছ লাগানোর বিষয়ে তিনি বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেন, ‘এখন বাজেট নেই। তবে বাজেট পাওয়া গেলে সেখানে গাছ লাগানো যেতে পারে।’
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে চলমান তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে আমাদের ব্যাপকহারে গাছ লাগাতে হবে। এ জেলার প্রতিটি সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বগুড়া জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের যে সকল সড়কে গাছ নেই সেখানে অতি দ্রুত গাছ লাগানো হবে।’