বিদেশ ডেস্ক।।
ইসরায়েলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু মত দিয়েছেন, চলমান যুদ্ধে গাজায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ একটি বিকল্প হতে পারে। এই মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। আজ রোববার এ বিষয়টি জানিয়েছে আল জাজিরা ও টাইমস অব ইসরায়েল।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, রেডিও কোল বেরামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, গাজায় পারমাণবিক বোমা ফেলা উচিত হবে কি না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি একটি বিকল্প হতে পারে।’ সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী আরও জানান, তিনি চান ইসরায়েল গাজা উপত্যকার দখল নিক। তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘আয়ারল্যান্ড অথবা মরুভূমিতে’ চলে যাওয়ারও উপদেশ দেন।
আমিচাই ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ওতজমা ইয়েহুদির দলের নেতা। তবে তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার অংশ নন এবং এ যুদ্ধের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। তিনি গাজায় মানবিক ত্রাণ পাঠানোরও বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘নাৎসিদের হাতে মানবিক সহায়তা তুলে দেওয়া উচিত নয়।’
‘গাজায় কোনো নিষ্পাপ, বেসামরিক মানুষ নেই’, দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, যারা ফিলিস্তিনি বা হামাসের পতাকা উড়ায়, তাদের ‘পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই’।
আল জাজিরা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বিরোধীদলের নেতা ইয়ার লাপিদ ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমিচাই এলিয়াহুর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোন যোগসূত্র নেই।’
‘ইসরায়েল ও আইডিএফ (ইসরায়েলের সেনাবাহিনী) আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড মেনে চলছে, যাতে সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কহীন মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়। জয়লাভের আগ পর্যন্ত এই মানদণ্ড মেনে চলা হবে।’
রোববার সকালে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এলিয়াহু কোনো সরকারি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এই তথ্য জানায়।
বিরোধীদলের নেতা ইয়ার লাপিদ এই মন্ত্রীকে অপসারণের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘সরকারে এ ধরনের চরমপন্থীদের উপস্থিতি যুদ্ধের মূল লক্ষ্যকে বিপদে ফেলছে, যা হল জিম্মিদের মুক্ত করা ও হামাসকে পরাজিত করা।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লাপিদ আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহুর উচিত সকালে তাকে বরখাস্ত করা।’
এলিয়াহুর দলের নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গির জানান, তিনি এই মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এলিয়াহু ‘রুপক অর্থে’ এসব কথা বলেছেন বলে দাবি জানান বেন-গির। এমন সময় ইসরায়েলি সরকারের এক মন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য এলো যখন দেশটির বিরুদ্ধে গাজার হত্যাযজ্ঞে রাশ টেনে ধরার চাপ বাড়ছে।
ইতোমধ্যে ৩০ দিনের নির্বিচার হামলায় গাজার নয় হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু। ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালালে এক হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এরপর থেকে গাজার ওপর নির্বিচার বিমানহামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ২৮ অক্টোবর থেকে স্থল হামলাও শুরু করেছে দেশটি।
আরও পড়ুন: গাজায় যা ঘটছে তা সহ্যের বাইরে ও অগ্রহণযোগ্য: ওবামা