চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ।।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে একটানা ভারি বর্ষণ, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জোয়ারের পানি। দুয়ে মিলে পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা।
ঝড়ের ঝাপটা খুব একটা না লাগলেও রোববার রাত থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে, যা অব্যাহত আছে সোমবারও। ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি উঠতে শুরু করে। ফলে পথে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বিভিন্ন সড়কে গোড়ালি থেকে কোমর সমান পানি ঠেলে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা এম এইচ এম মোসাদ্দেক বলেন, “রাতে যখন রেমাল উপকূল অতিক্রম করছিল তখন ভাটা ছিল। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ৯টা ২২ মিনিট থেকে জোয়ার শুরু হয়।
“এখনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।”
সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
এরমধ্যে নগরীর প্রবর্তক মোড়ের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি করুণ। এই সড়কে কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা চলছে, পানির মধ্যেই হেঁটে চলাচলা করছেন পথচারীরা।
নগরীর মুরাদপুর মির্জাপুর সোসাইটির বাসিন্দা সাইফুল আলম বলছিলেন, “সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখি সোসাইটির রাস্তা পানির নিচে। আর বাসা থেকে বের হতে পারিনি।”
প্রবর্তক মোড় এলাকায় দেখা যায় কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা টেনে নিচ্ছেন চালকরা। পথচারীরা কেউ কেউ সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে হেঁটে মোড় পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও সেই আইল্যান্ডও ডুবে আছে পানিতে। মোড় লাগোয়া খাল উপচে পানি বয়ে যাচ্ছে সড়কের উপর দিয়ে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, “ নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর, নাজিরপাড়া, বিবিরহাট, জিইসি, ২ নম্বর গেইট, শুলকবহর, চকবাজার, চান্দগাঁও এবং বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
“আগ্রাবাদ, বন্দর ও পতেঙ্গা এলাকার পরিস্থিতির সংবাদ এখনো পাইনি। পূর্ণিমা গেছে মাত্র কয়েকদিন আগে। এখন সাগরে ভরা কাটাল। আর নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেশি। এসময়ই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। অতিবৃষ্টি হচ্ছে।”
ভারি বর্ষণে ড্রেন উপচে পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে মোবারক আলী বলেন, “যেমন মুরাদপুর এলাকায় কিন্তু ড্রেনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নালা ভরে পানি সড়কের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ধারণক্ষমতার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
অতি ভারি বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দাদের রোববার রাত থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।