স্টাফ রিপোর্টার।।
ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের কথা ভাবলে এখনো শিউরে উঠতে হয়। ৫ বছর হয়ে গেল চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির। এখন সেখানে সব আগের মতো চলছে। আগুন লাগা ভবন সংস্কার করে ব্যবহার হচ্ছে। আসামিরা জামিন পেয়ে দেদারছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আগুন লাগা স্থানে আগের মতোই ব্যবসা চলছে। মাঝখান থেকে আমার বাবার মতো ৭১টি প্রাণ চলে গেল। আশ্বাস পেলেও ৫ বছরেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডিতে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী মো. জুম্মনের ছেলে মো. আসিফ ঢাকাবার্তাকে এসব কথা বলেন।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরো অনেক। এ ঘটনায় নিহত জুম্মনের ছেলে মো. আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার ওসি আবদুল কাইউম।
আসামিরা হলেন- ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন।
এরপর ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার চার্জগঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরুর আদেশ দেন আদালত। তবে ১ বছরের বেশি সময় পার হলেও একজনের সাক্ষ্যও শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার মো. মিলন জানান, মামলাটিতে প্রথম সাক্ষী বাদী আসিফের আংশিক সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ বাদীর অবশিষ্ট সাক্ষ্যের তারিখ ধার্য রয়েছে।
বাদী আসিফ বলেন, মামলার ধীরগতিতে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি। প্রতি তারিখে সাক্ষ্য দিতে গেলে কখনো বিচারক থাকেন না, আবার কখনো নানা অজুহাত দিয়ে সাক্ষ্য হয় না। তবে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক বলছেন ভিন্ন কথা।
তিনি ঢাকাবার্তাকে বলেন, বাদী একদিন সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। মাঝে ডিসেম্বরে আদালত বন্ধ ছিল। সাক্ষ্য হয়নি। প্রতি তারিখে সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়। কিন্তু সাক্ষী আদালতে না আসলে কিছু করার নেই। আশা করছি, আগামী ধার্য তারিখে সাক্ষীকে হাজির করে দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে। বাদী ন্যায়বিচার পাবে। এদিকে চুড়িহাট্টার ঘটনায় শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের প্রত্যেককে ১ লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলা হলে কোনো ক্ষতিপূরণই পাননি দাবি করেন নিহত জুম্মনের ছেলে মামলার বাদী আসিফ।
এদিকে এ মামলার প্রধান দুই আসামি ভবনের মালিক হাসান ও হোসেনের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক বলেন, এ ঘটনায় আসামিরাই ভিক্টিমাইজড। আসামিদের ভবন থেকে আগুন লাগেনি। বাইরের সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় আগুন লাগে। আসামিরা বাড়ি হারিয়েছেন। সম্পদ হারিয়েছেন। ওই দুর্ঘটনায় তাদের মা গুরুতর জখম হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন। আদালতকে বলেছি তারাও ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া রাজউক থেকে অনুমতি ছিল। সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবসার লাইসেন্স ছিল। মামলার বিচার কাজ দ্রুত শেষ হলে আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন: অবৈধ বিদেশিদের বাসা ভাড়া দিলে জরিমানা