ফারহানা আক্তার ।।
ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য, ছয় ঋতুর দেখা পূর্বের মত পাই না। জলবায়ু যে শুধু ঋতু পরিবর্তন করছে তা নয় তার সাথে পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের আবহাওয়ার। বর্তমানে বাংলাদেশে কিছুদিন পর পর চলমান বৃষ্টি, বিশেষ করে অতি বৃষ্টি হচ্ছে । সাধারণত শীতকাল শুরু হয় (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রয়ারি) মাসে, নভেম্বরের মাঝামাঝি হালকা শীত পড়া শুরু করে। এখন চলছে নভেম্বর। এই সময়ে আবহাওয়ার অবস্থান থাকবে হেমন্ত ও শীতের আবছায়া। চারপাশে থাকবে কুয়াশা ভেজা ঘাসের উপর শিশিরের ফোটা। আকাশে ভেসে বেড়াবে সাদা মেঘ। আশেপাশের বায়ুর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে এই সময় দেখা যাবে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব। বাড়ির মেয়ে-বউরা অপেক্ষা করে নতুন ধানের আগমনের জন্য। ঘরে ঘরে চলতে থাকে পিঠা-নবান্নের উৎসব। এসব আনন্দ এখন বইয়ের পাতা জুড়ে দেখা যায়, বাস্তবতায় বেশিরভাগ জিনিসের সাথে সদৃশতা নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া ও ঋতুর পাশাপাশি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, খরা, বন্যাসহ আবির্ভাব ঘটছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক র্দুযোগের। পরিবেশবিদসহ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বড় মাত্রার ভূমিকম্প।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ ক্লাইমেট এর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় প্রথম বাংলাদেশ।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে, ড. আতিকুর রহমান বলেন, “আমাদের এখানে এখন দুর্যোগ বেশি হচ্ছে, নদী ভাঙন বাড়ছে, বেশি বেশি ঝড়, বন্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উওরবঙ্গে শুষ্কতা তৈরি হচ্ছে আর দক্ষিণবঙ্গে লবণাক্ততা বাড়ছে। এসব কিছুই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।” (সূত্র : বিবিসি বাংলা)।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা রকম প্রাকৃতিক র্দুযোগ এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন, ভূমিধ্বসের মাত্রা এবং সময় অসময়ে ঘুর্ণিঝড়। পূর্বে দেখা যেত যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর পরপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিত কিন্ত বর্তমান সময়ে প্রায় ২ থেকে ৩ বছর পরপরই দেখা যাচ্ছে ভয়ানক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ । এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে নদীভাঙন ডেকে আনছে মহাবিপর্যয়। এছাড়া ঘূণিঝড়ের উপকূলবাসীর দুঃখের শেষ নেই।
পানি চক্রের কারণে পর্বতের গায়ে বরফের আস্তরন পরে জমাট হওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে সেই জমাট হওয়া বরফ গলে গিয়ে পর্বতের গা থেকে নেমে আসে। এভাবেই তৈরি হয় নদী। নদীর পানি ধীরে ধীরে ধাবিত হয় সমুদ্রের দিকে। সমুদ্রের কাছাকাছি এসে খুব তীব্র গতিতে নদীর পানি ছুটে চলে। বর্ষার সময় উজানে পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অতি বৃষ্টি বা বৃষ্টির সাথে নদীর স্রোতের ধারাও বেড়ে যায়। নদীর পানির এই তীব্র স্রোত ভাটার দিকে ধাবিত হওয়ার সময় নদীর পাড়ে আঘাত হানে। পাড়ে আঘাত হানার কারণে তীরবর্তী মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। নিম্নস্তরের মাটি দুর্বল হয়ে যখন উপড়িভাগের মাটির ভার সহ্য করতে পারে না ঠিক তখনি অনেকাংশ মাটি আছড়ে পরে নদীতে, সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের।
নদীভাঙনের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারেঃ
১। অতি বন্যার কারণে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি।
২। প্রাকৃতিক ও মানুষের দ্বারা র্দুযোগ সৃষ্টি।
৩। নদীর নিম্নস্তর পলি মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়া।
৪। জনগণের অসচেতনতা।
৫। নদীর তীরের গাছপালা কেটে ফেলা।
৬। নদীর প্রশস্ততা।
৭। নদীতে নতুন চর তৈরি হওয়া।
৮। অপরিকল্পিত ড্রেজিং।
৯। নদী থেকে বালি উত্তোলন।
প্রায় ৫ বছরের পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার সমান। ২০২০ সালে শরীয়তপুর বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা এবং তার সাথে প্রায় ৪ লাক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করেছে। সিলেটের বন্যায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৩ লাক্ষ মানুষ। এখন বর্ষায় মৌসুমে ‘নদীভাঙন’ এলাকার মানুষের বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যা, বৃষ্টি, খড়া তো আছেই। নদীভাঙনের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, বাড়িঘর, আঙিনা ফলে এসব নদীভাঙন এলাকার মানুষের ভাগ্যে জুটছে হাহাকার। এই বছর কার ভাগ্যে জুটবে, বাসস্থান ও রুজিরোজগার হারানোর চিন্তা। জলবায়ু পরিবর্তন কি আমাদেও দেশের আবহাওয়ার সাথে নদী ভাঙনের কারণ হচ্ছে না? যদি কারণ হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের এটা প্রতিরোধ করার জন্য করণীয় কী!
নদীভাঙন রোধে করণীয়-
গাছ প্রকৃতি রক্ষায় খুব ভালো বন্ধু। নদীর আশেপাশে গাছ রোপণ করলে বিশেষ করে যে গাছের শিকড় মজবুত যেমন- নারিকেল গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিলে নদীভাঙন প্রতিারোধ ব্যবস্থা করা সম্ভব। নদীর পাড়ের বাঁধ দেবার ব্যবস্থা করা, ভাঙন রোধ করার জন্য বিভিন্ন নকশা প্রণয়ন করা এবং পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হলে নদীভাঙন রোধ কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ অঞ্চল। এশিয়া উন্নয়নের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ প্রধান নদীগুলোর প্লাবনভূমিতে বসবাস করে, যা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ লাখ মানুষ চরাঞ্চলে বসবাস করেন।
পদ্মা খরস্রোতা নদী হওয়ার কারণে আশেপাশে বসবাস করেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগই নদীভাঙনের ঝুঁকির আওতাভুক্ত। দ্য ডেইলি স্টার বাংলার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, গত ২২ বছরে শুধু পদ্মা ও যমুনার ভাঙনে ৫০ হাজার হেক্টর জমি বিলীন হয়েছে, যা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চেয়েও ছয়গুন বড়। সেন্টার ফর এনভারনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্য অনুযায়ী , যমুনায় ২৫ হাজার ২৯০ হেক্টর ও পদ্মায় ২৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমি বিলীন হয়েছে, তাদের গবেষণায় দেখা গেছে গত ২২ বছরে যমুনা ও পদ্মা এই দুই নদীর ভাঙনে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
সিআইজিআই উপদেষ্টা ড. মমিনুল হক সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো নদীভাঙনের শিকার দেশ বিশ্বে আর নেই। যমুনা নদী প্রায়শই তার চ্যানেল পরিবর্তন করে, যার ফলেই নদীভাঙন ঘটে। বাংলাদেশের নদীগুলোর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ এগুলো হিমালয় থেকে নেমে আসার সময় বিপুল পরিমাণ পলি নিয়ে আসছে, নতুন চরভূমি তৈরি করছে এবং ভাঙন সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে আর কোনো দেশে এমন বৈশিষ্ট্যযুক্ত নদী নেই। তিনি বলেন কিছু কিছু এলাকায় আমরা দেখতে পাই যমুনার অনেকগুলো চ্যানেল রয়েছে এবং এটি গড়ে ১১-১২ কিলোমিটার চওড়া। ভাঙনরোধে ভাঙনপ্রবণ নদীগুলোতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত ভাঙনরোধ সম্ভব না।’ সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার (বাংলা) ।
নদী মা, নদী সব, বাংংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। এদেশে প্রায় ৮০০টির মতো নদী রয়েছে, কিন্তু সাধারণত ২৩০টি নদী ধরা হয়। দেশের মোট আয়তনের প্রায় এক দশমাংশ নদী। এদের আবার শাখা-প্রশাখা অনেক। সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভেন্ন হাওড় ও বিল নামে, এই হাওড় ও বিলের মাছ থেকে বেশিরভাগ মানুষের আমিষের অভাব পূরণ হচ্ছে। নদীর এক কূল ভেঙে আরেক কূলের আবির্ভাব, অতিরিক্ত বন্যার কারণে নদীতে পলি মাটি যুক্ত হয়ে ভরাট হয়ে গিয়ে পরিণত হচ্ছে নদীভাঙনের। নদীভাঙনের আরও অনেক কারণ আছে। নদীর মাছ দিয়ে যেমন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের আমিষের অভাব পূরন হচ্ছে, ঠিক তেমনি আরেক শ্রেণির মানুষের নদীভাঙনের জন্য অভাব হচ্ছে বাসস্থান বা ঘরবাড়ি। শুধু যে ঘরবাড়িবিলীন করছে তা নয়, তার সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়, কলেজ এমনকি অনেকের দেখা সুন্দর স্বপ্ন। নদীভাঙন এরিয়াতে বসবাসকৃত মানুষগুলোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাজা থেকে পরিণত হচ্ছে ফকিরে। কোথায় যাবে, কেমন করবে, কীভাবে শুরু করবে এসব চিন্তা করে শুরু হয় তাদের উদ্ভাস্তু জীবন।
শরীয়তপুরে নড়িয়া থানার, মূলফৎগঞ্জ ও চাকধ বাজারের মাঝামাঝি ‘দেওয়ান ক্লিনিক’ নামে গড়ে ওঠে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার। বাপ-দাদার ব্যবসা এবং সেখানে বসবাসকৃত মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে প্রসবকালীন এবং প্রসবের পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন সেবা দেওয়া হতো দেওয়ান ক্লিনিকে। ভালোই চলছিল তাদের সেবা দেওয়ার কার্যক্রম বাঁধ সাধলো ২০২০ সালের নড়িয়া থানার নদীভাঙন। ক্ষণিকের মধ্যে তলিয়ে গেল তাদের স্বপ্ন। বর্তমানে তাদের উত্তরাধিকাররা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন, ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের রূপ বাস্তবায়নের।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ সালে একটা নোটিশ জারি করেন, সেখানে লেখা আছে, ভারতের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন এর তথ্য অনুযায়ী ভারতের উওর সিকিমে তিস্তা নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, তিস্তা নদীর পানি ৪ অক্টোবর সকাল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বিকাল নাগাদ বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বিভিন্ন লেখক, কবি সাহিত্যিক ও সাধারণ মানুষ প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, তাদের একটাই বাসনা পূর্বে থেকে প্রচার অভিযান চালিয়ে ক্ষতির পরিমাণটা কমিয়ে আনা।
প্রায় ১৮ বছর আগে সুফিয়া বেগম (ছদ্মনাম) বন্যায় বাড়িঘর হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। সরকারের সহযোগিতায় আবাসন ব্যবস্থা হলেও, বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রোজগারব্যবস্থা। ফসলি জমিবিলীন হওয়াতে সে এখন বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহ শ্রমিকের কাজ করে। বন্যার চারমাস বাড়িতে পানি উাঠার কারণে চলে আসেন রাজধানী ঢাকাতে। ছোট একটা টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী রিকশা বা ভ্যান চালিয়ে যতটুকু রোজগার করে আয় করেন, সেটা দিয়ে ঘরভাড়া দেন এবং সংসার চালান এছাড়া তিনি গৃহশ্রমিকের কাজ করে যতটুকু আয় করেন তা জমিয়ে রাখেন, যাতে বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে নতুন করে বাড়ি ঘর মেরামত করতে পারেন। তার কাছে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আল্লাহ দেখবো। আর খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন আল্লাহ যা খাওয়ায় তাই খাই। এভাবেই অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। অতীতের কথা জিজ্ঞাসা করলে তার ভাবুক মন চলে যায় সুন্দর সোনালী দিনগুলোতে, চোখ ঝলঝল করে, দীর্ঘ হাহাকার ছেরে বলেন একসময় সব ছিল ধানী জমি, গরু কোনো অভাব ছিলনা আমার সংসারে। বন্যার কবলে পরে, আমার সব শেষ। গরু বিক্রি করে দিছি, জমি বিক্রি করে সংসার বাঁচাইছি, আইজগে হামার কিছুই নাই।
মারজান বেগম (ছদ্মনাম) এসেছেন নড়িয়া থানার, শরীয়তপুর থেকে। জীবনে প্রথম রাজধানী ঢাকাতে আশা জীবিকার উদ্দেশ্যে। বিয়ে হয় বড় বাড়িতে। ভিটার জমি, ফসলি জমি, হাস-মুরগি, গাছগাছালির কমতি ছিল না। গেরস্ত পরিবারেই বাবা-মা বিয়ে দিছিল। আজ নদীভাঙনের কবলে পড়ে অসহায় স্বামী নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকায়। যেখানে একসময় মারজানের শ্বশুরবাড়িতে রাখা হতো কাজের লোক, আর আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে আমি কাজ করি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে। তার স্বামী অটো-রিকশা গ্যারেজে কাজ করেন, মাসিক আয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ভারী কাজ করতে পারে না। মানসিক আঘাত পাওয়ার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পরেছেন। তাই তার সংসার চলে খুব স্বল্প টাকায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে নদীভাঙনটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। নদীর পানি যখন সমুদ্রে যেয়ে একত্রিত হয়, সাধারণত সমুদ্রের নিকটবর্তী হলে, পানির তীব্রতা বেড়ে যায়। তখনি তীব্র পানির স্রোতে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। নদীর পানির স্রোত নদী ভাঙার কারণ হতে পারে। এছাড়া বন্যাও নদী ভাঙার আরেকটি কারণ। প্রতিবছর প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টরজমি নদীভাঙনে হারিয়ে যায়। এই ভাঙনের ফলে প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীভাঙনের ফলে এদেশে প্রতিবছর ২৫ কোটি ডলার ক্ষতি হয় (উকিপিডিয়া)
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন প্রাতিনিয়ত যুদ্ধ করছে নদীভাঙনের নিষ্ঠুরতার সাথে। বাড়িঘর, জমিজমা বিলীন হবার পাশাপাশি নিঃস্ব হয়ে পারি জমাচ্ছে শহড়ে জীবিকার তাগিদে।
নদী আমাদের দেশ ও জাতীয় সম্পদ। আর এ সম্পদ ফুরিয়ে গেলে প্রভাব পরবে পানির উপর, এর খেসারত দিতে হবে আমাদের জনগণকেই। তাই নদী ভাঙন রোধ ও বাসস্থান সংকট থেতে উওরণের পথ খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
লেখক : শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মী