সবজান্তা সমশের ।।
বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ রয়েছে, যেগুলোর অর্থ প্রায় একই রকম মনে হয়, কিন্তু ব্যবহার ও প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এমনই একটি বিভ্রান্তি হলো উদ্দেশে এবং উদ্দেশ্যে শব্দের ব্যবহার। বিশেষত, যখন বলা হয় “জাতির উদ্দেশে ভাষণ” অথবা “জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ,” তখন এই প্রশ্ন আরও প্রকট হয়ে ওঠে। আসুন, দুটি শব্দের অর্থ ও প্রয়োগ বিস্তারিতভাবে বুঝে নেওয়া যাক।
উদ্দেশে শব্দটি একটি অব্যয় বিভক্তি, যা কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশকে নির্দেশ করে। এটি সরাসরি কোনো উদ্দেশ বা কারণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যখন বলা হয়, “জাতির উদ্দেশে ভাষণ,” তখন এর অর্থ দাঁড়ায় যে ভাষণটি সরাসরি জাতিকে লক্ষ্য করে দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, “উদ্দেশে” শব্দটি একেবারেই সঠিক এবং প্রাসঙ্গিক।
অন্যদিকে, উদ্দেশ্যে শব্দটি বিশেষ্য “উদ্দেশ্য” এর একটি রূপ, যা কোনো কাজের লক্ষ্য বা অভিপ্রায় বোঝায়। এটি সাধারণত কোনো কার্যক্রমের উদ্দেশকে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, “এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যে হলো দারিদ্র্য বিমোচন।” এখানে “উদ্দেশ্যে” শব্দটি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে নির্দেশ করছে, যা কার্যক্রমের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
এই দুটি শব্দের ব্যবহারে মূল পার্থক্য হলো প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট। যখন কোনো কার্যক্রম বা বার্তা সরাসরি নির্দিষ্ট শ্রোতা বা জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়, তখন উদ্দেশে শব্দটি ব্যবহার করা উচিত। যেমন, “জাতির উদ্দেশে ভাষণ।” এটি ভাষণের সরাসরি প্রাপক হিসেবে জাতিকে বোঝায়। অন্যদিকে, যদি কোনো কাজের লক্ষ্য বা অভিপ্রায় প্রকাশ করতে হয়, তখন উদ্দেশ্যে শব্দটি ব্যবহার করা হবে।
বাংলা ভাষার নিয়ম অনুযায়ী এবং প্রচলিত ব্যবহারের দিক থেকে, “জাতির উদ্দেশে ভাষণ” বাক্যটি সঠিক এবং বহুল ব্যবহৃত। এটি স্পষ্ট করে যে ভাষণটি জাতির প্রতি নিবেদিত এবং সরাসরি তাদের জন্য। অন্যদিকে, “জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ” বাক্যটি ভাষণের লক্ষ্যকে বোঝাতে পারে, তবে এটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় না।
সুতরাং, এই বিভ্রান্তি দূর করতে বুঝতে হবে যে “উদ্দেশে” শব্দটি সরাসরি শ্রোতা বা প্রাপকের উদ্দেশে ব্যবহার হয়, যেখানে “উদ্দেশ্যে” শব্দটি লক্ষ্য বা অভিপ্রায় প্রকাশ করে। জাতিকে লক্ষ্য করে কোনো ভাষণ দিলে “উদ্দেশে” শব্দটিই সঠিক।