রবিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫

জ্বলছে গাজা, ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের জেরে হতাহতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
জ্বলছে গাজা, ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা

বিদেশ ডেস্ক।।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের জেরে হতাহতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আজ রোববারও পাল্টাপাল্টি তীব্র হামলা চালিয়েছে দুই পক্ষ। দুই দিন ধরে চলা হামলায় অন্তত ৬০০ ইসরায়েলি ও ৩৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত কয়েক হাজার। এরই মধ্যে হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল।

হামাসের হামলার পর গতকাল শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য বলেছিলেন, তাঁরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছেন। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছিল না। এরপর আজ গাজায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে নেতানিয়াহুকে অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। এদিনই দেশটিতে হামলা চালিয়েছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত শিয়াপন্থী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় দুই ইসরায়েলি পর্যটককেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এসবের জেরে বিশ্লেষকদের অনেকের আশঙ্কা, নতুন করে বড় যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্য।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত তিন ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ আজ রোববার দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা

হামাস শনিবার সকালে ইসরায়েলে কয়েক হাজার রকেট ছোড়ে। গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করেন। সেদিনই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। শনিবার রাতভর এবং গতকালও গাজার বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, টানেল, মসজিদ ও হামাস কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় ৩৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ শিশু রয়েছে। আহত প্রায় ২ হাজার ২০০ জন।

ইসরায়েলের হামলার মধ্যে আজ গাজায় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষকে উদ্ধারে তৎপরতা দেখা গেছে। গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি শরণার্থীশিবিরে পাঁচ শিশুসহ এক পরিবারের সাতজনের মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি মসজিদের ধ্বংসস্তূপেও চলছিল উদ্ধারকাজ। সেখানকার বাসিন্দা রামেজ নেইদেক বলেন, ‘আমরা ফজরের নামাজ শেষ করার পরপরই মসজিদে বোমা মারা হয়।’

ইসরায়েলের হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরে গাজার চিকিৎসক খামিস এলেসি বিবিসিকে বলেন, ‘গাজায় আপনি যেখানেই যাবেন, মৃত্যু দেখতে পাবেন। দেখবেন শেষকৃত্য চলছে। এটি এমন যেন আপনি একটি চলচ্চিত্র দেখছেন। চলচ্চিত্রটি পৃথিবীতে মানুষের জীবনের সমাপ্তি নিয়ে।’

এদিকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকেও আজ সাইরেনের শব্দ ভেসে এসেছে। শনিবারের ধ্বংসযজ্ঞের পর আজও সেখানে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রকেট হামলা ও হামাস যোদ্ধাদের হামলায় অন্তত ৬০০ ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নাহাল ব্রিগেডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথন স্টেইনবার্গ রয়েছেন। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

হামাস যোদ্ধারা অন্তত ১০০ ইসরায়েলি নাগরিক ও সেনাকে আটক করেছেন। ইসরায়েল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবারের হামাস যোদ্ধাদের হামলার সময় একটি নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রায় ৩০ ইসরায়েলির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইন্টারনেটে প্রকাশিত অনেক ভিডিওতেও হামাস যোদ্ধাদের হাতে ইসরায়েলিদের আটক হতে দেখা গেছে।

এদিকে আজও ইসরায়েলে গাজা সীমান্তসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েল সেনাদের লড়াই হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, যেসব স্থান দিয়ে হামাস যোদ্ধারা অনুপ্রবেশ করেছিলেন, সেগুলো বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। এ সময় অনেক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা ও আটক করা হয়েছে।

ইসরায়েলের তেল আবিবে রকেট হামলার পর স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, ৭ অক্টোবর

গাজা উপত্যকা ঘিরে হাজার হাজার সেনা মোতায়েনের খবরও জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার আশপাশে বসবাসকারী ইসরায়েলিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর একজন মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা হামাসের ওপর তীব্র হামলা চালাতে যাচ্ছি। আর এটি দীর্ঘদিন ধরে চলবে।’ অপরদিকে হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কোয়ানোয়া বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরক্ষার জন্যই হামলা চালিয়েছেন তাঁরা।

ঠিক ৫০ বছর আগে ১৯৭৩ সালে ইসরায়েলে অপ্রত্যাশিত এক হামলা চালিয়েছিল মিসর ও সিরিয়া। এর পর থেকে শনিবার হামাসের হামলাকে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হিসেবে দেখা হচ্ছে। গতকাল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের দখল করা শেবা ফার্ম এলাকায় রকেট ও কামান হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা চাই না হিজবুল্লাহ এই সংঘাতে জড়াক।’

গাজার একটি ভবনে আজ রোববার বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল বাহিনী

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এই সংঘাত শুরু হলো পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার মধ্যে। দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বহু বছর ধরে থমকে আছে। নেতানিয়াহুর উগ্র ডানপন্থী সরকারের অধীনে সম্প্রতি পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়েছে। এ সময় পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোয় বৃদ্ধি পেয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, গাজায় যে হামলা শুরু হয়েছে, তা পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়বে।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net