বাণিহ্য ডেস্ক।।
কোম্পানির শেয়ার ও অর্থসম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান, সিইওসহ আটজনের নামে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাগুলো করেছেন প্রয়াত শিল্পপতি লতিফুর রহমানের (ট্রান্সকম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান) ছোট মেয়ে শাযরেহ হক। যেখানে তিনি (শাযরেহ হক) মা শাহনাজ রহমান, বড় বোন সিমিন রহমানসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার হওয়া মামলায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর বাকি তিনজনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে আজ শুক্রবার গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে তোলা হবে জানা গেছে। তারা হলেন- ট্রান্সকম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও ব্যবস্থাপক (কোম্পানি সেক্রেটারি) আবু ইউসূফ মো. সিদ্দিক।
২০২০ সালের ১ জুলাই শিল্পপতি লতিফুর রহমান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাসভবনে মারা যান। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই প্রয়াত লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান ট্রান্সকমের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হন তার বড় মেয়ে সিমিন রহমান।
এদিকে গুলশান থানার ২০ নম্বর মামলার এজাহারে বাদী শাযরেহ হক উল্লেখ করেছেন, তার বড় বোন সিমিন রহমান ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩ হাজার ৬০০ শেয়ার তাকে (শাযরেহ হক) এবং তার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করতে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে করে নেন। এতে সহযোগিতা করেন মামলার দুই নম্বর আসামি ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, কামরুল হাসান, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক এবং আবু ইউসুফ। যা তিনি (শাযরেহ হক) বাবা লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর জানতে পারেন। এই জালিয়াতিতে যে সই ও টিপসই ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো আমাদের না। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। তাই তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
২১ নম্বর মামলার অভিযোগে শাযরেহ হক অভিযোগ করেন, তার বাবা মারা যাওয়ার আগে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি রেখে গেছেন। মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী সেসব সম্পদ দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বণ্টন না করে বড় বোন সিমিন রহমান ও মা শাহনাজ রহমান বেশি শেয়ার হস্তগত করতে অসৎ উদ্দেশ্যে এবং অন্যান্য সুবিধা পেতে কয়েকজনের সহায়তায় মনগড়া ‘ডেথ অব সেটেলমেন্ট’ করেন। যখন বাবা কুমিল্লাতে থাকতেন। সেটেলমেন্টে আমার, আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান, বাবা লতিফুর রহমান এবং আমার ছেলের পুত্রদের স্বাক্ষর জাল করা হয়।
এই মামলায় সিমিন রহমান, শাহনাজ রহমান, ট্রান্সকম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান ও সিমিন রহমানের ছেলে এবং ট্রান্সকম লিমিটেডের হেড অফ ট্রান্সফরমেশন যারাইফ আয়াত হোসেনের নাম রয়েছে৷
আরেক মামলার এজাহারে বাদী বলেন, লতিফুর রহমান মারা যাওয়ার সময় বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং এফডিআরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখে যান, যা শরিয়া অনুয়ায়ী আমিসহ আমার ওয়ারিশরা পাবেন। কিন্তু আমার মা শাহনাজ রহমান ওই টাকার নমিনি (ট্রাস্টি) হওয়ায় সেই টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেন, যা পরে ৬০ কোটি টাকা দিয়ে ট্রান্সকম লিমিটেডের ১৮ শতাংশ কেনার বায়না করেন। পরে সেই শেয়ার সিমিন রহমানকে দান করা হয়।
এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- শাহনাজ রহমান, সিমিন রহমান, মো. ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, কামরুল হাসান এবং আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই-এর পরিদর্শক আলাউদ্দিন।
আরও পড়ুন: দেশে গাড়ির দাম বেড়েছে, বিক্রি কমেছে ৩০ শতাংশ