বাণিজ্য ডেস্ক।।
সপরিবারে সৌদি আরবে ওমরা করতে ট্রাভেল ট্যুর এজেন্সি খুঁজছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাফিজুল ইসলাম (৩৭)। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে একদিন ‘তাকওয়া ট্রাভেলস’ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির খোঁজ পান। যারা অল্প খরচে ওমরাসহ দুবাইতে প্যাকেজে ঘোরার সুযোগ দিচ্ছে। এমন অফার দেখে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সাইফুল আলমের (৩৫) সঙ্গে। যোগাযোগ করে এ বিষয়ে কথা বললে সাইফুল আলম তাকে আকর্ষণীয় হোটেলসহ প্যাকেজের বিভিন্ন ছবিসহ তথ্য হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেখান। এসব দেখে হাফিজুল ওই ট্রাভেল এজেন্সির ফাঁদে পড়েন, হারান লক্ষাধিক টাকা।
মূলত তাকওয়া ট্রাভেলস নামে ওই ট্রাভেল এজেন্সিটি ছিল ভুয়া। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের মতো নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সি। এসবের ভিড়ে কোনটা ভালো, আর কোনটা মন্দ তা বোঝা বেশ কঠিন। ঝামেলা ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করতে ভ্রমণপিপাসুরা দ্বারস্থ হচ্ছেন এজেন্সিগুলোতে। আর সেই সুযোগটি নিচ্ছে কিছু ভুয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সি। অনলাইনে লোভনীয় অফার দিয়ে ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে তারা। ভ্রমণের নামে লোকজনদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র। সম্প্রতি এই চক্রটির খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
সংস্থাটি বলছে, চক্রটি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস খুলে ২৬টি ফেসবুক পেজ এবং কয়েকটি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে অল্প দামে ট্যুর প্যাকেজ বিক্রির নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। গত এক বছরে চক্রের হাতে দুই শতাধিক ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন। এ সময়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
ভুক্তভোগী হাফিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফেসবুকে একদিন একটি পেজে কথা হয় তাকওয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী সাইফুল আলমের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী, গত ২৮ নভেম্বর বিকালে রাজধানীর কলাবাগানে তার প্রতিষ্ঠানে যাই। সেখানে গিয়ে আলোচনা শেষে ওমরার জন্য ১০ রাত এবং দুবাইয়ের তিন রাত ট্যুর বাচ্চাসহ চার জনের চুক্তি হয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭০০ টাকা। ওই দিনই আমি পাসপোর্টের ফটোকপিসহ ২০ হাজার টাকা বুকিং মানি দিয়ে আসি। এর একদিন পরই সাইফুল আমাকে বলেন, সবকিছু রেডি হয়ে গেছে, আরও টাকা দিতে হবে। পরে আরও ১ লাখ ৩৫ হাজার মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার দেই। এই টাকা নেওয়ার পর সাইফুল আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কল করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায় না। পরে উপায় না পেয়ে আমি কলাবাগান থানায় এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি।’
সাইফুল আলমের মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন—এমন আরও অনেকের মধ্যে আরেকজন ভুক্তভোগী মোস্তাকিম হোসেন। তিনি ও তার বাবা ওমরা করার জন্য এভাবে ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা দিয়েছিলেন সাইফুলের কাছে। কিছু দিন পর জানতে পারেন ওমরার জন্য যাকে টাকা দিয়েছেন, তিনি একজন প্রতারক। মোস্তাকিম বলেন, ‘ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথাবার্তা বলে প্রথমে বিশ্বাস না করে উপায় নেই। পরে আমি ও বাবা ওমরা করতে যাবো বলে টাকা জমা দেই। আমি ব্যাংকে লেনদেন করতে চেয়েছিলাম। তবে সে কৌশলে তার কর্মচারীকে দিয়ে নগদ টাকা নেয়। ঠিক এক সপ্তাহ পরে আমি আর তার খোঁজ পাইনি। ফোন দিলে বন্ধ পাই। পরে শুনেছি ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে।’