ঢাকার মগবাজারে স্কাউট সদস্যরা রাস্তায় যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির চালকদের হর্ন না বাজাতে অনুরোধ করছিলেন, দাঁড়িয়ে ছিলেন নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে। কিন্তু ওই স্কাউট সদস্যদের রাস্তা থেকে সরাতে গাড়ি ও বাইক চালকরা উল্টো জোরে জোরে হর্ন বাজাতে থাকলেন।
রাগত স্বরে চিৎকার করতে থাকা এক চালকের ভাষ্য ছিল, “আপনারা (স্কাউট সদস্য) রাস্তা ক্লিয়ার করেন, আগে যেতে দেন।“
শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে মুক্ত রাখতে রোববার সকাল ১০টা থেকে ১০টা ১ মিনিট রাজধানীতে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘১ মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচি পালন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির স্লোগান ছিল ‘শব্দদূষণ বন্ধ করি, নীরব মিনিট পালন করি’।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে, শাহবাগ মোড়, উত্তরা, বিজয় সরণী মোড়, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, গাবতলী, মগবাজার, মহাখালী, গুলশান-১, কমলাপুর, বৌদ্ধ মন্দির এবং যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় সামনে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে লিফলেট বিলি করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।কিন্তু মগবাজার, শাহবাগসহ কয়েকটি জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে এক মিনিটের জন্য শব্দহীন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
সকালে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে মগবাজারের ইনসাফ হাসপাতালের যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আলিমুল হাসান। মগবাজার মোড়ে আসতেই তিনি দেখেন, স্কাউট সদস্যরা রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে গাড়ির চালকদের হর্ন না বাজাতে অনুরোধ করে চলেছেন।
তারা কিছু গাড়িতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্টিকারও বিতরণ করেন, যাতে লেখা ছিল ‘সুরক্ষিত শ্রবণ, সুরক্ষিত জীবন; অযথা হর্ন বাজাবেন না’।
আলিমুল বলেন, “আমি দেখলাম স্কাউটের ওরা মাইকে কথা বলতেছে, প্ল্যাকার্ড নিয়া দাঁড়াইয়া আছে। যাতে মানুষ হর্ন না বাজায়, শব্দদূষণ না করে। কিন্তু এই ওদেরকেই সরানোর জন্য বাইক, সিএনজি, গাড়িওয়ালারা আইসা জোরে জোরে হর্ন দিতেছে।”
তিনি বলেন, “এভাবে আসলে হবে না। বাংলাদেশের মানুষের যে এই কথায় কথায় হর্ন দেওয়ার বদঅভ্যাস, এইটা কোনোদিন চেঞ্জ হবে না যদি ট্রাফিক পুলিশ আর আইন কড়া না হয়।”
মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে ভ্যান নিয়ে দাঁড়ানো সবজি বিক্রেতা কালাম বলেন, “দেখলাম উনারা মাইকে হরেন দিতে মানা করতেছে। কিন্তু এইসব কইরা কি হইব মামা! হরেন বাজাইবোই। কারণ হরেন দিলে কিছু কয় না কেউ।”
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও বা উবারের অনেক চালকসহ যারা ভাড়ায় বাইক চালান, তারা মগবাজার মোড়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করেন। ওই বাইক চালকদের একজন হিমাংশু ধরের ভাষ্য, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া চালককে ‘হর্ন দিতেই হয়’।
অন্য কোনো বিকল্প কি নেই? হিমাংশুর উত্তর, “ হর্ন না দিলে মানুষ যে ফুটপাথ রাইখা রাস্তা দিয়ে হাঁটে, সেটা তারা টের পায় না।“
মগবাজারের মত ঢাকার শাহবাগও এক মিনিটের জন্য শব্দহীন ছিল না। সেখানে দায়িত্বরত গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, “এখানে ১ মিনিটের জন্যও হর্ন থামানো যায়নি। যদিও হ্যান্ডমাইকে বারবার বলা হচ্ছিল যাতে হর্ন না বাজায়। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।”
সকাল ১০টার দিকে শাহবাগ মোড় পার হচ্ছিলেন এক বাইক চালক। শব্দদূষণের পেছনে হর্নের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমি নিজে হর্ন বাজাই না। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অযথা হর্ন বাজায় পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলো।”
শব্দ দূষণ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সচিবালয়ের সামনে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকার মারজিয়া রহমান। এক মিনিটের কর্মসূচি সফল না হলেও তিনি আশাবাদী।
মারজিয়া বলেন, “এই এক মিনিটের জন্য হর্ন বাজানো বন্ধ করা যায়নি, এটা সত্য। যেসব চালক সামনের দিকে ছিলেন, তারা হর্ন না বাজালেও পেছনে যারা ছিলেন, তারা হর্ন বাজাচ্ছিলেন। কিন্তু এটা তো প্রতীকী কর্মসূচি ছিল। একসময় হয়ত সত্যিই মানুষ এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারবে।”
আরও পড়ুনঃ পুরান ঢাকা এবার নতুন রূপে সাজবে