শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

থুসারার আগুন বোলিংয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে থুসারার হ্যাটট্রিক পূর্ণ হতেই গ্যালারি খালি হতে শুরু করে। কেউ কেউ তো রাগ-ক্ষোভ উগরে দিয়ে স্টেডিয়াম ছেড়েছেন। তবে হতাশ হতে হয়নি মন খারাপ করে গ্যালারিতে থেকে যাওয়া দর্শকদের। রিশাদের ৭ ছক্কার ইনিংসে হারের বেদনা ভুলে গেছেন দর্শকরা।

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
থুসারার আগুন বোলিংয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

খেলা ডেস্ক।।

বাংলাদেশের ইতিহাস পাল্টানোর মিশনের স্বাক্ষী হতে পুরো গ্যালারিই ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। গ্যালারিতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের পুরোটা সময় আনন্দ উল্লাসে কাটিয়েছে স্বাগতিক দর্শকরা। এই আনন্দ বিষাদে রূপ নিতে সময় লাগেনি। গলের স্কুল ক্রিকেট খেলে বেড়ে উঠা নুয়ান থুসারার বোলিংয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে থুসারার হ্যাটট্রিক পূর্ণ হতেই গ্যালারি খালি হতে শুরু করে। কেউ কেউ তো রাগ-ক্ষোভ উগরে দিয়ে স্টেডিয়াম ছেড়েছেন। তবে হতাশ হতে হয়নি মন খারাপ করে গ্যালারিতে থেকে যাওয়া দর্শকদের। রিশাদের ৭ ছক্কার ইনিংসে হারের বেদনা ভুলে গেছেন দর্শকরা। পুরো গ্যালারি ‘রিশাদ রিশাদ’ স্লোগানে কেঁপে উঠে।

রিশাদের ৭ ছক্কার ইনিংসে হারের বেদনা ভুলে গেছেন দর্শকরা। পুরো গ্যালারি ‘রিশাদ রিশাদ’ স্লোগানে কেঁপে উঠে।

রিশাদের ৭ ছক্কার ইনিংসে হারের বেদনা ভুলে গেছেন দর্শকরা। পুরো গ্যালারি ‘রিশাদ রিশাদ’ স্লোগানে কেঁপে উঠে।

গত দশ বছরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যার একটিতেও সিরিজ বগলদাবা করতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। সিলেটে প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয়টি জিতে সমতায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। সুযোগ ছিল পুরোনো ইতিহাস পাল্টানোর। কিন্তু সেটি হয়নি ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। আরও একবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারলো তারা। আগে ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা ১৭৫ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশকে। জবাবে খেলতে নেমে থুসারার বোলিংয়ে ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। আর তাতেই ২৮ রানের জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিজেদের করে নিলো শ্রীলঙ্কা।

সিলেটের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ১৭৫ রানের লক্ষ্যটা মোটেও কঠিন ছিল না। কিন্তু এক ওভারেই থুসারা ম্যাচটা বের করে নিয়েছেন। ইনজুরির কারণে মাথিশা পাথিরানাকে শেষ ম্যাচে একাদশে খেলানো হয়নি। তার বদলেই আজকে মাঠে নামার সুযোগ হয়েছে থুসারার, যিনি অনেকটা মালিঙ্গার মতোই বোলিং করেন। মালিঙ্গার শহরে মালিঙ্গার তত্ত্বাবধানে থেকে বেড়ে উঠেছেন থুসারা। আজ সুযোগ পেয়ে নতুন বলে নিজের প্রথম ৯ বলের মধ্যেই যা করার করে ফেলেন। পরের ওভারগুলোতে আরও একটি উইকেট নিলেও খুব বেশি কার্যকরী ছিলেন না তিনি।

লক্ষ্যে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে সফট ডিসমিসাল হন লিটন দাস। চতুর্থ ওভারে থুসারার হাতে বল তুলে দেন লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। নতুন বল হাতে নিয়েই ভেলকি দেখিয়েছেন লঙ্কান সাবেক ক্রিকেটারের এই শিষ্য। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত, তৃতীয় বলে তাওহীদ হৃদয় এবং চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। মাত্র ২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় শান্তরা। থুসারার নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন শান্ত (১)। এরপর হৃদয় (০) বলের লাইনেই যেতে পারেননি। থুসারার সামনে সুযোগ আসে হ্যাটট্রিকের। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ হ্যাটট্রিক আটকাতে পারলেন না। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তাকে আউট করে পঞ্চম লঙ্কান বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন থুসারা।

এক ওভার পরে এসে এবার থুসারা তুলে নেন সৌম্য সরকারকে। এবার তার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন বাংলাদেশি ব্যাটার। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে অল্পতেই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা। সেই শঙ্কা আরও বেড়ে যায় প্রথম ম্যাচে বিধ্বংসী ইনিংস খেলা জাকের আলী আউট হতেই। এদিন শুরু থেকে অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করেছেন, খেলেছেন ১৩ বলে ৪ রানের  ইনিংস। বাকি ব্যাটারদের নিয়ে আর কত দূরেই বা যাবে, এমন ভাবনা নিয়ে যখন বসেছিলেন দর্শকরা, তখনই সিলেটে ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। প্রথমে শেখ মেহেদীর সঙ্গে ৩১ বলে ৪৪ রান এবং তাসকিনের সাথে ২১ বলে ৪১ রানের জুটিতে জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করে ফেলেছিলেন রিশাদ!

মেহেদী ২০ বলে ১৯ রান করে আউটের পর তাসকিন সঙ্গী হন রিশাদের। এই লেগ স্পিনারের দেখাদেখি তাসকিনও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। বিনুরা ফার্নান্ডোকে বিশাল এক ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রিশাদ। দ্রুত রান তোলার তাগিদে লম্বা শট খেলতে গিয়ে পরের ওভারেই মাহিশ ঠিকশানার শিকার হন তিনি। শনিবার ৭ ছক্কায় প্রথম ম্যাচে জাকেরের করা ইনিংসে ছয় ছক্কার রেকর্ডটি ভেঙে ফেলেন রিশাদ। শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে ৭ ছক্কায় ৫৩ রান করতে পারেন তিনি।

রিশাদের ক্যামিও ইনিংসে শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৩০ রানের। কিন্তু কঠিন এই সমীকরণ মেলাতে পারেননি তাসকিন-মোস্তাফিজ। ওই ওভারে প্রথম ডেলিভারি ওয়াইড হলেও ব্যাট হাতে কোনও রানই নিতে পারেননি তারা। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মারতে গিয়ে আউট হন তাসকিন। ২১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন এই পেসার। লঙ্কান বোলারদের মধ্যে ৫ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার থুসারা। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে নাড়িয়ে দিতে দারুণ ভূমিকা রেখে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। ৪ ওভারে ২০ রান খরচায় তার শিকার ৫টি উইকেট। এছাড়া হাসারাঙ্গা ৩২ রানে নেন দুটি উইকেট।

এর আগে টানা তৃতীয়বারের মতো টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তাসকিনের বলে মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ধনঞ্জয়া। তবুও কুশল মেন্ডিসের দৃঢ়তায় রানের চাকা সচল থাকে সফরকারীদের। কুশলের সঙ্গে কেউই বড় জুটি গড়তে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে রেখে কুশল বাহারি সব শটে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান তুলে ফেলেন। সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে ৮৬ রানে রিশাদের শিকার হন লঙ্কান এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ৫৫ বলে ৬ চার ও ৬ ছক্কায় নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি সাজান তিনি। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক হাসারাঙ্গা খেলেছেন ১৫ রানের ইনিংস। অলরাউন্ডার দাসুন শানাকার ব্যাট থেকে এসেছে ১৯ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে কেউই আজকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারেননি। তাসকিন-শরিফুলরা কোনও না কোনও ওভারে খেই হারিয়েছেন। মোস্তাফিজ টানা তিন ম্যাচে ৪০ এর ওপরে রান দিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার তাসকিন। ২৫ রান খরচায় তার শিকার ২ উইকেট। এছাড়া লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ৩৫ রান খরচ করে দুটি উইকেট নিয়েছেন। মোস্তাফিজ ও শরিফুল যথাক্রমে ৪৭ ও ২৮ রানে রানে নেন একটি উইকেট।

 

আরও পড়ুন: ‘বাজবল’ নিয়ে ইংল্যান্ডকে খোঁচা দিলেন রোহিত শর্মা

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net