ফারহানা আক্তার ।।
২২ এপ্রিল, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস । এবারের প্রতিপাদ্য পৃথিবী বনাম প্লাস্টিক। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিবছর ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন করা হয়। সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে দিবসটি পালিত হয়। বর্তমানে আর্থ ডে নেটওয়ার্ক কর্তৃক বিশ্বব্যাপি এ দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৩ টির মতো দেশে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত একটি দিবস এটি।
ধরিত্রী দিবস পালন শুরু হয় ছয়ের দশকের একেবারে শেষে ১৯৬৯ সালে সানফ্রান্সিসকোতে। ইউনেস্কো সম্মেলনে ২২ এপ্রিল এই বিশেষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময়ে শান্তি কর্মী জন ম্যাককনেল মাদার আর্থ এবং শান্তির ধারণাকে সম্মান করার প্রস্তাব দেন। প্রাথমিকভাবে উওর গোলার্থে বসন্তের প্রথম দিন ১৯৭০ সালের ২১ মার্চ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উদযাপনের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে মার্কিন সিনেটের গেলর্ড নেলসন পরিবেশ রক্ষার জন্ম ২২শে এপ্রিল ১৯৭০ তারিখে ধরিত্রী দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। [ সূত্র : ইটিবি বার্তা, পশ্চিমবঙ্গ]।
প্রকৃতি তার নিজের মত রুপ ধারণ করতে চায়, কিছু চ্যালেন্জিং বিষয়ের জন্য সেটি করা সম্ভব হয় না। দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর নানা চ্যালেন্জ। যেমন- দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নদী ভাঙ্গন, মাটির ক্ষয়, দূষণ, বন উজার, গাছপালা কেটে ফেলা সহ ভিন্ন মাত্রার প্রাকৃতিক অবক্ষয় দিন দিন বেড়েই চলছে।
বিশ্ব এখন ঝুঁকিপূর্ণ, পরিবেশ বিপর্যয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে বেড়ে যাচ্ছে কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, ভোলাটাইন অর্গানিক কম্পাউন্ট সহ ওজন স্তর। ঢাকা শহরের পাশাপাশি বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহার বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তন করতে ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বর্জ্য মহাসাগরে যায়, যেগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে ও জীব বৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। [সূত্র : বণিক বার্তা]।
বিশ্ব ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুসারে দেশে প্রতি বছর ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, আর এসব বর্জ্যের ৭০ শতাংশই ফেলা হয় রাস্তার ধারে, নদীর তীরে, উন্মুক্ত ভাগাড়ে কিংবা যত্রতত্র।
এই বর্জ্য পঁচনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ যা বাতাসে ছড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, যা বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বায়ু দূষণ সৃষ্টি করছে।
প্লাস্টিক দূষণ এবং যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে তৈরি হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের এক উপাদান, যা এখন বঙ্গোপসাগরের মাছের পেট থেকে শুরু করে নদীর মাছের পেটেও পাওয়া যায়। এছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক দেখা যাচ্ছে, মানুষের রক্তে, মায়ের বুকের দুধে, মানব দেহের ফুসফুসে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে শীর্ষ তালিকায় চলে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালেয়ের এক দল গবেষক তাদের গবেষণায় দেখান যে, প্রতি বছর বাংলাদেশের একজন নাগরিক গড়ে প্রায় ১৩ হাজার ৮৮টি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করছে লবণ থেকে ও ১০.২ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছে চিনি গ্রহণের মাধ্যমে।
প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রীর পচনশীল ক্ষমতা
প্লাস্টিকের বোতল পুরোপুরি ধ্বংস হতে সময় লাগে ১০০০ বছর, প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যাগ ধ্বংস হতে সময় লাগে ৪৫০ বছর, প্লাস্টিকের স্ট্র পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ বছর বিদ্যমান থাকে, প্লাস্টিকের কাপ ধ্বংস হতে সময় লাগে ৪৫০ বছর, প্লাস্টিকের টুথব্রাশ ধ্বংস হতে সময় লাগে ৫০০ বছর।
দিনকে দিন আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহার অসচেতনতার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতি সহ জলবায়ু। বিশ্বকে সুস্থ্য রাখতে হলে মেনে চলতে হবে বিভিন্ন উপায় যা আমাদের জিবন সহ রক্ষা করবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
প্রতিষ্ঠান বা বাসাবাড়িতে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন-প্লাস্টিকের ব্যাগ, ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাস্টিকের বক্স, মোড়ক,পলিস্টেরন জাতীয় ব্যাগ, কাটাচামচ, স্ট্র, কফির কাপ, বোতল, প্লেট, কাপ, ট্রে, কলম ইত্যাদি এর পরিবর্তে বিকল্প বাঁশের, মাটির, কাঁসার, কাঁচের বা স্টেইনলেস স্টীলের তৈরী চামচ, কাঁটা চামচ, প্লেট, পানির পাত্র, স্ট্র, পেন্সিল, পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ সহ দ্রুত পঁচনশীল ও মাটির সাথে মিশে যায় এরকম পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষায় কী করতে পারি আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য
সবুজ জায়গা বাড়ানোর জন্য জোড় দিতে হবে,সাথে বন যেনো না উজাড় হয় সে দিকে নজড় দিতে হবে। প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালন করতে হবে ব্যক্তিগত ভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় এবং কর্মক্ষেত্রে এ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পরিবারের সদস্যদেরকে পরিবেশ রক্ষায় ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করা যেতে পারে।
বাড়ির আঙিনা, কর্মক্ষেত্রের চারপাশ, সৈকত, পার্ক, নদী, আশেপাশের এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসাটা দরকার।
লেখক : শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মী