চেন্নাইয়ে চিদাম্বরম স্টেডিয়াম! প্রবেশ পথে মহেন্দ্র সিং ধোনির বিশাল প্রতিকৃতি। তবে কি এটি ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক অধিনায়কের শহর! না জানলে ভুল ভাবতেই পারে যে কেউ। যারা জানেন তারা বলেই ফেলবেন ধোনির জন্ম রাঁচিতে এই শহর থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে! অবশ্য তিনি অন্য শহরের হলেও তিনি আইপিএলের দল চেন্নাইয়ের অধিনায়ক। যার হাত ধরে তারা পেয়েছে দারুণ সাফল্য। আর এ কারণেই চিদাম্বরমকে ধোনিরই মাঠ বলা হয়। যেখানে আজ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। এই মাঠে বাংলাদেশ শেষ কবে খেলেছে জানেন? ২৫ বছর আগে! তার মানে বর্তমান দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়েরই তখন জন্ম হয়নি। সেবার কেনিয়ার কাছে হেরেছিল আকরাম খানের দল। চিদাম্বরমে খেলা সেই ম্যাচের একমাত্র সদস্য অবশ্য এবার আছেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে। তিনি খালেদ মাহমুদ সুজন, যেখানে তিনি বল হাতে ২০ রান খরচ করে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।
তার মানে সুজনের স্মৃতি হতে পারে দলের জন্য অনুপ্রেরণা। অন্যদিকে তার সঙ্গে এই মাঠে বাংলাদেশকে পথ দেখাবেন ‘লোকাল বয়’ বলে পরিচিত শ্রীধরন শ্রীরাম। তিনি বর্তমানে টাইহগারদের পরামর্শক। বলার অপেক্ষা রাখে না চিদাম্বরমে বাংলাদেশকে পথ দেখাতে পারে এই দুজনই। আর আইপিএলের সুবাদে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো ভালোভাবেই চেনেন এই মাঠ। যেখানে স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। তার মানে আক্রমণ কৌশলে অনেকটাই এগিয়ে টাইগারদের স্পিন শক্তি। অন্যদিকে শ্রীরামের কাছ থেকে তার ঘরের মাঠের সবকিছু জেনে নিয়েছে টাইগার ক্রিকেটাররা। সংবাদ সম্মেলনে এমনটা অকপটে জানিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই শ্রীরাম আমাদের এখানকার উইকেট কন্ডিশন নিয়ে অনেক সাহায্য করছে। তার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারছি।’
বাংলাদেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করে হিমাচলে। যেখানে হিমালয়ের হিমেল হাওয়া খুব বেশি অস্বস্তিতে পড়তে দেয়নি খেলোয়াড়দের। দিনে গরম থাকলেও তা ছিল সহনীয়। কিন্তু চেন্নাইয়ে অন্য পরিবেশ। উত্তাল বঙ্গোপসাগরের ধারে হওয়াতে উত্তপ্ত। বেশ গরম শহরজুড়ে। স্টেডিয়াম এলাকায় হাঁটলে কিছুক্ষণের জন্য পুরান ঢাকা বলেও অনেকেই ভুল ভাবতে পারেন। ঘিঞ্জি, সরু গলিতে লাইন ধরে মুখরোচক খাবারের দোকানগুলো পুরান ঢাকার স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে। তবে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে বদলে যাবে সব ধারণা।
৫০ হাজার ধারণক্ষমতার এই মাঠ এতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে পারে সেটি চিন্তাই করা যায় না। হবে না কেন এখানে তো আইপিএলের ফাইনালও হয়েছে। অন্যদিকে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের চিন্তাতেও আছে এখনকার স্পিন বান্ধব উইকেটের বিষয়। আজ টাইগারদের মুখোমুখি হওয়ার আগে তা নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথাও জানান তিনি। ইউলিয়ামসন বলেন, ‘একটা ভেন্যু থেকে আরেকটা ভেন্যুতে যেতে অনেক কিছু বদল হচ্ছে। এখানে হয়তো স্পিন উইকেট থাকবে। কিন্তু আমার মনে হয় দুই দলেরই ভালো স্পিনার আছে। আমার মনে হয় স্পিনাররা বড় ভূমিকা রাখবে কাল।’
ধর্মশালায় প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি দু’রকম। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানদের হারিয়েছে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে। কিন্তু পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজে ভাবে হেরেছে দল। ব্যাটি-বোলিংয়ে খেই হারিয়েছে টাইগাররা। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশরা সংগ্রহ করেছে ৩৬৪ রান করেছে ৯ উইকেট হারিয়ে। জবাব দিতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতায় টাইগারদের হার মানতে হয়েছে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে। বিশ্বকাপ রেসে এক জয় এক হার নিয়ে সাকিবের দলের সামনে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ।
টানা দুই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ শুরু করা কিউইদের বিপক্ষে লড়াই সহজ নয়। তবে চিদাম্বরম স্পিন সহায়ক উইকেটে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানরা স্বপ্ন বুনতেই পারেন। তার সঙ্গে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদী হাসান। তবে দারুণ স্পিন আক্রমণ নিউজিল্যান্ডেরও। মিচেল স্ট্যান্টনারের সঙ্গে আছেন ইশ সোধি আর রাচিন রবীন্দ্র। কদিন আগেই বাংলাদেশে গিয়ে স্বাগতিকদের ধসিয়ে এসেছেন লেগ স্পিনার সোধি। তবু উপমহাদেশের দল হওয়ায় এই মাঠে বাংলাদেশ বেশ ভালোই চেনা আবহ পাবে বলে মনে করেন উইলিয়ামসন। কিউই অধিনায়ক বলেন, ‘নিশ্চয়ই উপমহাদেশের এইসব কন্ডিশনে তারা খুব পরিচিত। অনেক ম্যাচ তারা জিতেছে এসব কন্ডিশনে।’
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়াতেই পারলো না অসহায় অস্ট্রেলিয়া