ঢাকাবার্তা ডেস্ক ।।
প্রখর সূর্যালোকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করে হজযাত্রীরা পবিত্র আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হলেন। সেখানে সব ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা এক আল্লাহর ইবাদতে পুরো শনিবার কাটান। ফজরের নামাজের পর পবিত্র মিনার উদ্দেশ্যে তাঁরা যাত্রা করেন এবং আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে কণ্ঠে অব্যাহতভাবে উচ্চারিত হয়- ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকা লাক’। অর্থাৎ, ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’
হজযাত্রীদের এই উচ্চারণে আরাফাতের ময়দান প্রকম্পিত হয় এবং পুরো এলাকা সাদা রূপ ধারণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তীব্র গরম উপেক্ষা করে ইবাদতে মগ্ন থাকেন। যেখানে জায়গা পেয়েছেন, সেখানে বসেই ইবাদতে সময় কাটান। দুপুরে এক আজানে আলাদা ইকামতে দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করেন। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ খুৎবা দেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়ক ড. মাহির বিন হামাদ বিন মুয়াকফ আল মুয়াইকিলিন। তিনি খুৎবার পর নামাজে ইমামতি করেন এবং ফিলিস্তিনসহ নির্যাতিত বিশ্ব মুসলিমের জন্য দোয়া করেন। এ সময় তাঁর কণ্ঠ বার বার ভারী হয়ে আসে।
অনলাইন আরব নিউজের তথ্যমতে, মাউন্ট আরাফাত বা আরাফাতের ময়দান দয়ার পাহাড় হিসেবে পরিচিত। এই ময়দানে সমবেত হওয়া ও দিনের কার্যক্রম হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ দিনটি হজযাত্রীদের কাছে সবচেয়ে স্মরণীয়, কারণ এদিন কোনো ভেদাভেদ থাকে না এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁরা অবস্থান করেন। আল্লাহর করুণা ও রহমত প্রার্থনা করেন, সমৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করেন।
আরাফাতের ময়দান পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয় যে, ১৪৩৫ বছর আগে এই মাউন্ট আরাফাত বা আরাফাত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে সমতা এবং মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন।
সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের মতে, এ বছর বিদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে সৌদি আরবের তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি। খোলা আকাশের নিচে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা কমপক্ষে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ছাতা ও পানি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ পবিত্র স্থানগুলোতে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে।
শনিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা কয়েক কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় ছুটবেন। সেখানে তাঁরা পাথর সংগ্রহ করবেন। আজ রোববার তাঁরা তিন দিনের জন্য মিনায় ফিরবেন, যেখানে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এদিন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে এবং সক্ষম মুসলিমরা পশু কোরবানি দেবেন। এরপর হজযাত্রীরা শেষবার তাওয়াফ করার জন্য মক্কায় ফিরবেন। হজ শেষ হওয়ার পর পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করবেন এবং তারপর মক্কা থেকে প্রিয় পবিত্র শহর মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সেখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারকে সালাম পেশ করবেন এবং মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করবেন।