খেলা ডেস্ক।।
ভারতের মাটিতে ইতিহাস গড়তে বসেছিল আফগানিস্তান। প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে তাদের আস্তানায় হারানোর একেবারে কাছে ছিল তারা। কিন্তু পারেনি। ২১২ রান তাড়া করতে নেমে বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানরা। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা টাই হয়। সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ, সেটাও টাই। দ্বিতীয় সুপার ওভারে ভারত হাসে শেষ হাসি।
বেঙ্গালুরুতে নিয়মরক্ষার তৃতীয় ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় ভারত। সিদ্ধান্তটা বিপরীতে যায়। ফরিদ আহমেদের বোলিং তোপে পড়ে টালমাটাল তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। আফগান পেসার দুই ওভারে তিনটি উইকেট তুলে নেন। তৃতীয় ওভারে পরপর যশস্বী জওসওয়াল (৪) ও বিরাট কোহলিকে (০) খালি হাতে ফেরান ফরিদ। তার পরের ওভারে ডাক মারেন সাঞ্জু স্যামসনও। মাঝে শিবম দুবে (১) প্যাভিলিয়নে ফেরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে। পঞ্চম ওভারে ২২ রানে চার উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া ভারতকে টেনে তোলেন রোহিত শর্মা ও রিংকু সিং। প্রথম দুই ম্যাচে ডাক মারা ভারতীয় অধিনায়ক প্রায়শ্চিত্ত করেন সেঞ্চুরি মেরে। রিংকুর সঙ্গে তার জুটি ছিল অবিচ্ছিন্ন ১৯০ রানের।
৪১ বলে ফিফটি করা রোহিত তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান আর ২৩ বল খেলে। ৬৪ বলে ১০ চার ও ৬ ছয়ে শতকের দেখা পান তিনি। রিংকু ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। এই দুজনের ব্যাটে ৪ উইকেটে ২১২ রানের বড় সংগ্রহ করে ভারত। রোহিত ৬৯ বলে ১১ চার ও ৮ ছয়ে ১২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৩৯ বলে ৬৯ রানে খেলছিলেন রিংকু, ২ চার ও ৬ চার ছিল তার ইনিংসে।
জবাব দিতে নেমে আফগানিস্তান ভারতের ঠিক উল্টো গতিতে শুরু করে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান উদ্বোধনী জুটিতে একশ ছাড়ানোর পথে ছিলেন। কিন্তু ১১তম ওভারে ৯৩ রানে তাদের জুটি ভেঙে যায়। কুলদীপ যাদব ৫০ রানে গুরবাজকে থামিয়ে ব্রেকথ্রু আনেন। ওয়াশিংটন সুন্দর ১৩তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন। পরপর ইব্রাহিম ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে থামান। অধিনায়ক ইব্রাহিমও ৫০ রান করেন। এরপর গুলবাদিন নাইব ও মোহাম্মদ নবীর ক্যামিও ইনিংসে ভারতকে চোখ রাঙায় আফগানিস্তান। ১৪তম ওভারে আবেশ খানকে দুটি ছয় ও এক চার মেরে ২০ রান তোলেন গুলবাদিন। পরের দুই ওভারে ঝড় তোলেন নবী, ১৭ রান করে মোট ৩৪ রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে।
তবে ছয় বলের মধ্যে দুটি উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। ১৬ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে থামেন নবী। গুলবাদিন সিঙ্গেল নিতে গেলে নন স্ট্রাইকার্স এন্ডে রান আউট হন করিম জানাত। অবশ্য গুলবাদিন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানরেট নিয়ন্ত্রণে রাখেন। শেষের আগের দুই ওভারে ২৭ রান তোলেন তিনি। তাতে শেষ ওভারে ১৯ রান প্রয়োজন ছিল। মুকেশ কুমারের দুটি ওয়াইড ভারতকে হতাশ করে। আর গুলবাদিন চার ও ছয় মেরে ব্যবধান কমান। শেষ দুই বলে পাঁচ রান দরকার ছিল। গুলবাদিন দুটি করে রান নিলে সমতায় শেষ হয় স্কোর। ৬ উইকেটে ২১২ রান করে সফরকারীরা।সুপার ওভারে গুলবাদিন ও গুরবাজ ওপেনিংয়ে নামেন। প্রথম বলে গুলবাদিন আউট হন। নবী ও গুরবাজ ছয় ও চার মেরে ১৬ রান তুলতে অবদান রাখেন।
১৭ রানের লক্ষ্যে জয়সওয়ালকে নিয়ে রোহিত ক্রিজে নামেন। আজমতউল্লাহর প্রথম দুটি বলে সিঙ্গেল নেন দুজনে। পরে টানা দুটি ছক্কা মারেন রোহিত। পঞ্চম বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে বিস্ময়করভাবে রিটায়ার্ড আউট হন তিনি। রিংকু জোরে দৌড়াতে পারবেন দেখে তিনি উঠে গিয়ে তাকে সুযোগ করে দেন। তার এই সিদ্ধান্তে হতভম্ব হয়ে আম্পায়ারের দ্বারস্থ হন আফগানরা। নিয়মের মধ্যে থাকায় বিষয়টি আর আগায়নি। জয়সওয়াল সিঙ্গেল নিয়ে সমতা ফেরালে আরেকটি সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ।
দ্বিতীয় সুপার ওভারে শুরুর দুটি বলে রোহিত ছয় ও চার হাঁকান। তৃতীয় বলে স্বাগতিক অধিনায়ক সিঙ্গেল নেন। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আউট হন রিংকু ও রোহিত। ১১ রান তোলে ভারত। লক্ষ্যটা ছোট দিলেও রবি বিষ্ণয়কে তুরুপের তাস বানায় ভারত।
১২ রান করতে নেমে প্রথম বলে নবী বিষ্ণয়ের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন। পরের বলে সিঙ্গেলে একটি রান এলেও বরাদ্দ থাকা দ্বিতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তৃতীয় বলে গুরবাজ ক্যাচ দেন রিংকুকে। সিরিজে ৩-০ তে জিতে যায় ভারত। এত কাছে গিয়েও ইতিহাস গড়তে না পারার দুঃখ হয়তো বহুদিন তাড়া করবে আফগানদের।
আরও পড়ুন: অ্যালেনের ঝড়ে বৃথা বাবরের হ্যাটট্রিক ফিফটি, সিরিজ হার পাকিস্তানের