রাজনীতি ডেস্ক।।
সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এই জোটের ঘোষণা দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের সভাপতিও হয়েছেন তিনি। এই জোটের আত্মপ্রকাশের দিনই দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাও দেন সৈয়দ ইবরাহিম।
তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’- নামে নতুন এই জোটে কল্যাণ পার্টি ছাড়াও ফ্রন্টের বাকি দুই দল হলো বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন)। সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমরা জোটগতভাবে যাবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। আর যুক্তফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি আছে। আর জোটের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন।
সাবেক ২০ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা বলেন, আন্দোলন ছেড়ে ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাকে মীরজাফর বলা হতে পারে, তা তিনি জানেন। ঝুঁকি মেনেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তারা চান, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক।
তিনি বলেন, আমরা তিনটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে আজকে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছি। আমাদের বক্তব্য সকলের জন্য সমালোচনার দুয়ার উন্মুক্ত থাকলো জনগণের দয়া, আপনাদের সহযোগিতা, সর্বোপরি আল্লাহ্র রহমত থাকলে সাফল্য আসবে। আমরা তার জন্য বড় রিস্ক নিচ্ছি।
২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারির বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি গঠন করেন সৈয়দ ইবরাহিম। আর যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগে তিনি বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং সর্বশেষ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোটে ছিলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মহাসচিব তফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়সহ তিনটি দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিযোগ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীকে ১২ দলীয় জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বহুমাত্রিক রূপ ধারণ করে আন্দোলনের নামে সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি দেশ, দেশের মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। তার এই ভূমিকাকে রাসপুটিন এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। দেশের এই দুঃসময়ে জনগণের সঙ্গে তার বেঈমানি করা একজন মীরজাফর ও বিশ্বাসঘাতক বলে ভবিষ্যতে বিবেচিত হবেন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ১২ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট আছে এবং আমরা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে একত্রিত আছি। বরং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং মুসলিম লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলের নেতার সিদ্ধান্তকে অমান্য করে আমাদের সঙ্গে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সভায় জোটের মুখপাত্র থেকে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশ এলডিপি’র মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে ১২ দলীয় জোটের নতুন মুখপাত্রের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে এবং জোটের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি থাকায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধানকে ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: বিএনপি নির্বাচনে আসুক, কার কত দৌড় তা দেখা যাক