ঢাকাবার্তা ডেস্ক।।
নোয়াখালীতে গত তিন মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় ও আদালতে দুই জায়গায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। এই সময়ে জেলায় ২৪১টি নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে, যা আগের তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এসব নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা, শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতাবিষয়ক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপনাকালে এ তথ্য প্রকাশ করে নোয়াখালী নারী অধিকার জোট। সংগঠনটির সভাপতি লায়লা পারভীন লিখিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের ঘটনার বৃদ্ধিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
নারী অধিকার জোটের প্রতিবেদনে সভাপতি লায়লা পারভীন উল্লেখ করেন, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর-এই তিন মাসে জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জেলায় ৩০টি নারী নির্যাতনের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। একই সময় জেলার দুটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে ২১১টি।
গত এপ্রিল থেকে জুন মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছিল থানায় ২৬টি এবং আদালতে ১৯০টি। তার আগের তিন মাসে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা হয় ১৩টি এবং আদালতে মামলা হয় ১৫৭টি। এতে স্পষ্টত জেলায় নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন নারী অধিকার জোটের এই নেত্রী।
লায়লা পারভীন বলেন, নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটছে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও হাতিয়া উপজেলায়। সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নবজাতক শিশুও। নবজাতকের লাশ ফেলে যাওয়া হচ্ছে অটোরিকশায়। জীবিত নবজাতক মিলছে জঙ্গলে। কোমলমতি শিশুরা শিক্ষাঙ্গনে গিয়েও শিক্ষক দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। একইভাবে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে কিশোরী অপহরণের শিকার হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এসব ঘটনা অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন বলেন, অপরাধ দমনে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও কম নয়। গেল তিন মাসে ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন নারী নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ জন আসামিকে। একই সময়ে সুবর্ণচর ও সোনাইমুড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে।
লায়লা পারভীন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলেও নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অঙ্গীকার থাকলে গ্রামে কিংবা শহরে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো।
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী অধিকার জোটের সদস্যসচিব মনোয়ারা আক্তার, সদস্য ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রৌশন আক্তার, মানবাধিকারকর্মী ফারজানা কাউছার, ফৌজিয়া সুলতানা প্রমুখ।
আরও পড়ুনঃ ঢাকায় আওয়ামী লীগের শক্তি বাড়াতে নতুন দায়িত্বে নানক–মায়া