গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করেছেন যুবলীগের এক নেতা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
যুবলীগের ওই নেতার নাম সোহেল রানা (৩০)। তিনি সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকায় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক। ওই এলাকার আলমের ছেলে। আর আহত মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নাম মো. লিটন (৪০); তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করেন।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি গাজীপুরের ভবানীপুর বাজার এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে থাকেন। বাজারের লোকজন তাঁকে খেতে দিলে খান, না দিলে না খেয়ে দিন চলে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্রাচের ওপর ভর দিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন লিটন। এ সময় যুবলীগ নেতা সোহেল দৌড়ে এসে লিটনকে বকাঝকা শুরু করেন। এ সময় লিটনের হাতে থাকা কাঠের তৈরি স্ক্র্যাচটি কেড়ে নেন। তখন লিটন সড়কের ওপর পড়ে যান। এ অবস্থায় স্ক্রাচ দিয়ে যুবলীগ নেতা লিটনকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। এক ব্যক্তিকে বাধা দিতে দেখা যায়। লিটনও দুই হাত দিয়ে স্ক্রাচের আঘাত ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বেশি পেটাতে শুরু করেন সোহেল। মার খেয়ে একসময় নিস্তেজ হয়ে যান লিটন। পরে স্ক্রাচ দিয়ে আরও একবার আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান ওই নেতা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সোহেল রানা দাবি করেন, ‘সে (লিটন) প্রতিবন্ধী হলেও নেশাগ্রস্ত। সে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতার ছবিসহ সাঁটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে উল্টাপাল্টা কথা বলে। যার কারণে তাকে দু-তিন দিন আগে কয়েকটা চড়থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেই। বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে আমি লিটনের সামনে পড়লে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। পরে আমি তাকে কয়েকটি বাড়ি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।’
সোহেল রানার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এস এম আলতাফ হোসেন জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি তিনি ভেঙে দিয়েছেন। তাই বর্তমানে সোহেলের প্রচার সম্পাদক পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আলতাফের দাবি, সোহেল ভেঙে দেওয়া কমিটির পরিচয় দিয়ে চলছেন।
মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মারধরের কোনো অভিযোগ পাননি জানিয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘তারপরও আমরা নিজ উদ্যোগে তার (সোহেলের বিরুদ্ধে) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। লোকমুখে শুনেছি, ওই নেতা নিজ উদ্যোগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।’