সোমবার, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষার ৪০ বছর পর পেলেন যোগদানের চিঠি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরির জন্য পশ্চিমবঙ্গের হুগলির দীনবন্ধু ভট্টাচার্য আবেদন করেছিলেন। সে সময় তিনি যুবক। অনেক দিন পর গত বৃহস্পতিবার চাকরিতে যোগদানের চিঠি পেয়েছেন তিনি। এখন তাঁর বয়স ৬৪।

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষার ৪০ বছর পর পেলেন যোগদানের চিঠি

বিদেশ ডেস্ক।।

প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ৪০ বছর পর ৬৬ জন পেলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের চিঠি। এ ঘটনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার। দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরির জন্য পশ্চিমবঙ্গের হুগলির দীনবন্ধু ভট্টাচার্য আবেদন করেছিলেন। সে সময় তিনি যুবক। অনেক দিন পর গত বৃহস্পতিবার চাকরিতে যোগদানের চিঠি পেয়েছেন তিনি। এখন তাঁর বয়স ৬৪। শুধু দীনবন্ধু ভট্টাচার্য নন, তাঁর মতো আরও আছেন ৬৬ জন। এখন তাঁদের অবসরের বয়সসীমাও পেরিয়ে গেছে।

৪০ বছর আগে (১৯৮৩ সালে) প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন দীনবন্ধু ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে। ফলাফল প্রকাশের পর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকের নিয়োগ হয়নি বলে সে সময় অভিযোগ ওঠে। দায়ের করা হয় মামলা। সুরাহা হয়নি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর চাকরিতে যোগদানের সেই চিঠি এসেছে সম্প্রতি।

দীনবন্ধু ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য যখন পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন আমি যুবক। চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে এখন আমার বয়স ৬৪। হাতে নিয়োগপত্র পেয়েছি। আমি একা নই, আমার মতো ৬৬ জন এমন চিঠি পেয়েছে। এর মধ্যে তো চারজন বেঁচেই নেই।’

চিঠি হাতে দীনবন্ধু ভট্টাচার্য গিয়েছিলেন বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে। তাঁর মতো নিয়োগপত্র পাওয়া অনেকেই সেখানে গেছেন চিঠির ‘মর্মার্থ বুঝতে’।

১৯৮৩ সালে শিক্ষক নিয়োগের চাকরির পরীক্ষা দেন দীনবন্ধু ভট্টাচার্য, অচিন্ত্য আদক, কালীধন বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকেই। পরীক্ষার পর সাক্ষাৎকার হয়েছিল সে বছর। ফলাফল প্রকাশের পরই সে ফল বাতিল হয়। অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হন। নিয়োগসংক্রান্ত সে মামলা কলকাতা হাইকোর্টে চলছিল। ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেন আদালত। নিয়োগসংক্রান্ত মামলাটি যখন দায়ের হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার।

এখন তৃণমূল ক্ষমতায়। গত কয়েক বছরে শিক্ষক নিয়োগ, পৌরসভায় নিয়োগ, রেশনসহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে খবরের শিরোনাম হয়েছে রাজ্যটি। নিয়োগের দাবিতে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন নবম-দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীরা।

কালীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষক নিয়োগের চিঠি পেয়েছেন হুগলি জেলা পরিষদের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স তখন ২৭-২৮ বছর। প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলাম। সাক্ষাৎকারের পর আমাদের নির্বাচনও হয়। কিন্তু সেই প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। আমরা সে বছরই আদালতে মামলা করি। সবকিছু বিক্রি করে মামলা চালিয়েছি।’

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যে নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহন দাস পণ্ডিত বলেছেন, ১৯৮৩ সালে জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হতো। রাজ্যজুড়ে এই সময় যে নিয়োগ হয়, তখন কেউ কেউ চাকরি পেয়েছেন আবার কেউ পাননি। সে সময় নিয়ম ছিল, ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেওয়া হবে, বাকি যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই কিন্তু যোগ্য, তাঁদের নেওয়া যেতে পারে। মামলাকারীদের দাবি ছিল যাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাঁদের সবাইকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। এই দাবিতে তাঁরা আদালতে মামলা করেন। ৩০ বছর পর ওই মামলার যে রায় বের হয় ২০১৪ সালে, সেটা রাজ্য সরকার মানতে চায়নি, তাই সেই মামলা আবার চলতে থাকে। অবশেষে গত ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্দেশ দেন চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানোই হয়নি আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৬০ পেরিয়ে গেছে। চারজন এখন বেঁচে নেই।

মোহন দাস পণ্ডিতের প্রশ্ন, শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কীভাবে জেলা পরিষদ নিয়োগের চিঠি পাঠাল। রাজ্য সরকারের উচিত ছিল খোঁজখবর নিয়ে আদালতকে সঠিক তথ্য দেওয়া। তবে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি হুগলি জেলা পরিষদের কেউ।

 

আরও পড়ুন: অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে গড়ে তোলা রাম মন্দির উদ্বোধন করলেন মোদি

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net