শনিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
House wife suicide before train in Chandpur

স্টাফ রিপোর্টার।।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দেড় বছর বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন তাহমিনা আক্তার (২৪) নামের এক নারী। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার কাজীগাঁও এলাকায় চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মা ও শিশুর লাশ উদ্ধার করেন চাঁদপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তখন হাজীগঞ্জ থানা-পুলিশের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিহত তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জের ধড্ডা গ্রামের দেওয়ানজি বাড়ির মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। ২০১৯ সালে একই উপজেলার সন্না গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সঙ্গে তাহমিনার সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তাহমিনার সঙ্গে মারা যাওয়া শিশুসন্তানের নাম আবদুর রহমান। তাহমিনার মুনতাহা নামে পাঁচ বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা আড়াইটার দিকে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট করেন তাহমিনা। পোস্টে তিনি তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন ও মেয়েকে দেখে রাখার অনুরোধ করে গেছেন। এর আগে গত ২৮ মার্চ স্বামী ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তাহমিনা।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে উঠিয়ে না নেওয়ায় বাবার বাড়িতে থাকতেন তাহমিনা। পরে বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নিয়ে স্বামী মাসুদুজ্জামানকে কুয়েতে পাঠান। স্বামী প্রবাসে থাকতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে তাহমিনার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন তাঁর স্বামী তাঁকে বাবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকতে বলেন। স্বামীর কথামতো তিনি হাজীগঞ্জের মকিবাদ চৌধুরীপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তখন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মুঠোফোনে তাঁকে নানা অপবাদ দিয়ে গালমন্দ করেন এবং স্বামী ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে প্রবাসে থাকা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে তাহমিনার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, ছাড়াছাড়ির পর গত ২৮ মার্চ হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তাহমিনা। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল তাহমিনার সাবেক স্বামী মাসুদুজ্জামান হাওলাদার দেশে ফিরে আসেন। তিনি অভিযোগ তুলে নিতে মুঠোফোনে তাহমিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং আবার স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে বলেন। অন্যথায় স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

থানায় অভিযোগ থাকায় প্রবাস থেকে ফেরার পথে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামান হাওলাদার। অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাসুদুজ্জামানের এক ভাই গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচ বছর ধরে ভাই ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে তাঁদের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁরা জানতে পেরেছেন, স্ত্রী-সন্তানের জন্য ভাই বিদেশ থেকে অন্তত ৭৬ বার টাকা পাঠিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় বিস্তারিত কিছুই জানেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে অপবাদের অভিযোগ সঠিক নয়।

তাহমিনার অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামানের পরিবারের সঙ্গে বসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি। এক সপ্তাহ আগে ওই ব্যক্তি দেশে আসেন। কিন্তু বাড়িতে না থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ান। পরে জানতে পেরেছেন, ওই ব্যক্তি আবার প্রবাসে চলে গেছেন।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে বিজিবি মোতায়েন

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net