রাজনীতি ডেস্ক।।
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক পাঁচজন সংসদ সদস্য। এ ছাড়া দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্যও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অবশ্য তাঁদের অনেকে দীর্ঘদিন দলে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির সাবেক ও বহিষ্কৃত নেতাদের সংখ্যাটি ১৩ জনের মতো। এর বাইরে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএম থেকে নির্বাচন করছেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ১৯ জন সাবেক নেতা। আর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই মনোনয়ন পেয়েছেন একজন। সব মিলিয়ে বিএনপির সাবেক নেতাদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত বগুড়ার চারটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলটির পদবঞ্চিত ও সাবেক চারজন নেতা। এর মধ্যে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রার্থী হয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। সংস্কারপন্থী পরিচয় দিয়ে আমাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়েছিল। দলে যেহেতু জায়গা নেই, তাই নিজের রাজনীতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
জিয়াউল হকের বাবা আজিজুল হক মোল্লাও বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালে একই আসনের উপনির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিয়াউল। এরপর ১৯৯৬ সালে দুবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুন) এবং ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জিয়াউল ছাড়া বগুড়া থেকে আরও যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানা। তিনি বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। আর বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনে প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল। তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
ময়মনসিংহে ভোট করবেন সাবেক দুই সংসদ সদস্য
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ্ শহীদ সারোয়ারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০১ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় শাহ শহীদ সারোয়ারকে গতকাল শুক্রবার নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। প্রসঙ্গত, বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্য এখন ৫০২ জন। আর চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদে আছেন ৮৩ জন। ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির আরেকজন সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান। এই আসনে ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।
টাঙ্গাইলে ১ জন ও কিশোরগঞ্জে ১ জন
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলে আমি অবহেলিত। কোনো সভায় আমাকে ডাকা হয় না। আমার মনে হয় আমাকে দলের আর প্রয়োজন নেই। তাই দল নির্বাচনে না এলেও আমি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁকে ২০০১ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। একসময় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পরে বিএনপি তাঁকে কয়েক দফায় বহিষ্কার করে।
বহিষ্কৃত চারজন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে
কুমিল্লা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া শওকত মাহমুদকে গত ২১ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করে বিএনপি। তখন ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপিতে প্রতিক্রিয়া হয়। এই সংগঠনের আহ্বায়ক কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ।
শওকত মাহমুদ গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে গেলে জনগণ মতপ্রকাশের সুযোগ পেত। এবারের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো যেভাবে তাকিয়ে আছে, তাতে সরকার জালিয়াতি করার সুযোগ কম পাবে। ইনসাফ কমিটি করে দল ভাঙব বলে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হয়নি। অন্য কোনো দলেও যাইনি। সমর্থকদের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। তাঁকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটি থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা আবুল কাশেম ফখরুল ঝালকাঠি-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। একইভাবে নির্বাহী কমিটির বহিষ্কৃত হওয়া খন্দকার আহসান হাবিব টাঙ্গাইল-৫ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মাহাবুবুল হাসান। গত ২৮ নভেম্বর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছেলে!