স্টাফ রিপোর্টার।।
শোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের (২৫) গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের প্রিয়জনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্বজনরা। ছেলে হারানোর শোকে অঝোরে কাঁদছেন মা রুমালি বেগম (৪৭)। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় নাসরিন বেগম (২২) বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার তারাপুর গ্রামে নিহত রইস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। রইস উদ্দিন ওই গ্রামের কামরুজ্জামানের ছেলে। রায়সা (৪) নামে এক মেয়ে ও হাসান নামে পাঁচ মাসের এক ছেলে সন্তান রয়েছে তার।
সরজমিন দেখা যায়, নিহত রইস উদ্দিনের বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। সবাই শোকে পাথর। অঝোরে কাঁদছে পাড়া-প্রতিবেশীরাও। তাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।
নিহতের মা রুমালি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাড়িতে আমার ছেলের স্ত্রী আছে। তার দুই সন্তান আছে। তারা ছোট। আমি কীভাবে বলব তাদের বাবা পৃথিবীতে আর নেই। তাদের দেখে কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলের লাশ আমি নিজ চোখে দেখে দাফন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন ছেলের লাশ যেন আমার বাড়িতে দাফন করা হয়।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন বেগম বলেন, অল্প বয়সে দুই সন্তানকে নিয়ে বিধবা হলাম। সন্তানদের কী বুঝ দেব আমি? কীভাবে বাঁচব? এখন স্বামীর লাশ ফিরে পেতে চাই। পাশাপাশি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
নিহত রইস উদ্দিনের চাচা আবদুল আলিম বলেন, নিহতের স্ত্রী, দুই সন্তান, বাবা-মাকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এমন মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছি না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ বিচার চাই।
স্থানীয় দোকানদার বাবু আলী বলেন, এলাকায় রইস উদ্দিনের বেশ সুনাম রয়েছে। ছুটি নিয়ে বাড়ি এলেই মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন তিনি। গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। এমন সোনার সন্তানকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশাহারা।
রইস উদ্দিনের মেজো ভাই বিজিবি সদস্য মাসুম রেজা বলেন, আমি সোমবার রাতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৪৯ ব্যাটালিয়নে এসেছি। কখন লাশ বুঝে পাব, তার নিশ্চয়তা নেই। শুনেছি বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত কী হয়েছে সেটিও জানতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা পাঁচ ভাইবোন। এর মধ্যে আমি আর রইস উদ্দিন বিজিবিতে ও বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জুনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) সৈনিক পদে যোগ দেন রইস উদ্দিন। এরপর দেশের সীমান্ত রক্ষায় বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সর্বশেষ যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু গত সোমবার ভোরে বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মারা যান তিনি।
আরও পড়ুন: বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত