খেলা ডেস্ক।।
স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে গত জুলাইয়ে নেপালের সঙ্গে কমলাপুর স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচে। গতকাল পূরণ হয়েছে আরেকটি স্বপ্ন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিতে পেয়েছেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলও। বয়সভিত্তিক ফুটবলে তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলেননি। তাই বাংলাদেশের হয়ে এটিই মাতসুশিমা সুমাইয়ার প্রথম গোল।
কমলাপুর স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ ফিফা প্রীতি ম্যাচে গোল করেছেন সুমাইয়া। বাংলাদেশের ৮-০ গোলের বিশাল জয়ে সুমাইয়া শেষ দিকে বদলি নেমে ৮৭ মিনিটে দলের সপ্তম গোলটি করেছেন। বক্সের ভেতর থেকে প্লেসিং শটে বল পাঠান জালে। গোল করার ১৪ মিনিট আগে মাঠে আসেন সুমাইয়া। বাংলাদেশ দলের একাদশে সুযোগ না পেলেও এখন তাঁর জার্সি নম্বর ৯।
ম্যাচ শেষে সুমাইয়া ছিলেন দারুণ খুশি। ফ্লাডলাইটের আলোয় তাঁকে উজ্জ্বল লাগছিল। নিজের আরেকটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার রাতে বললেন, ‘এই গোল করে আমার অনেক ভালো লাগছে। বিজয়ের মাস এখন। ইচ্ছা ছিল মাঠে নেমে একটা গোল করব। ওটা করতে পেরে আমি খুব খুশি।’ যে লক্ষ্য নিয়ে জাপান ছেড়ে বাংলাদেশের এসেছেন, সেটাকে স্বার্থক মনে করছেন সুমাইয়া, ‘আমার ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলব। সেটা খেলতে পেরেছি আগেই। আজ প্রথম গোলও করেছি। আমার এত দিনের পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে।’

বিজয়ের মাসে গোল করে খুশি সুমাইয়া।। ঢাকাবার্তা।।
সুমাইয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা জাপানের নাগোয়া শহরে। তবে এখন তিনি পুরোদস্তুর বাংলাদেশি। বাংলা ভালো বলতে পারলেও লিখতে পারেন না। ২৩ বছরে পা দেওয়া সুমাইয়াই বাংলাদেশের নারী ফুটবলে প্রথম প্রবাসী ফুটবলার, যিনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন।
ছেলেদের ফুটবলের জামাল ভূঁইয়া ও তারিক কাজীর কথা সবাই জানেন। ডেনমার্ক আর সুইডেন থেকে এসে এ দুজন বাংলাদেশের জার্সিতে খেলছেন। মেয়েদের জাতীয় দলে সুমাইয়া। বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বৈত পাসপোর্ট তাঁর। ফলে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে কোনো জটিলতা হয়নি। জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়েছে বাফুফেকে, এই যা।
সুমাইয়ার ফুটবল–দক্ষতা বেশ ভালো। ফুটবল নিয়ে নিজের কারিকুরির কিছু ছবি দিয়েছিলেন ফেসবুকে। সেটি দেখে ২০২১ সালে তাঁকে ডাকে বাফুফে। বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সঙ্গে সুমাইয়া তখন ঢাকাতেই থাকতেন। মা মাতসুশিমা তোমোমিকে (জাপানি) নিয়ে একদিন আসেন বাফুফে ভবনে। সেই দিনটাই সুমাইয়ার জীবন পাল্টে দেয়।

বাংলাদেশে মানিয়ে নিয়েছেন সুমাইয়া।। ঢাকাবার্তা।।
বাফুফে তখন তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেলে খেলবেন কি না। সুমাইয়াও সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন, খেলবেন। এরপরই তাঁকে দলভুক্ত করে বসুন্ধরা কিংস। কিংসের জার্সিতে মেয়েদের গত লিগে খেলেছেন সুমাইয়া, গোলও আছে কয়েকটি। গত বছর মালদ্বীপে দিভেহি সিফাইঙ্গে ক্লাবে সুমাইয়া খেলেছেন সাবিনা খাতুনের সঙ্গে।
কিছুটা লাজুক সুমাইয়া বলেন, ‘২০০৯-১০ সালের দিকে আমি প্রথম আসি বাংলাদেশে। তখন সবকিছু অচেনা ছিল আমার কাছে। এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে সব। বাফুফে ভবনে জাতীয় দলের ক্যাম্পে আছি এ বছর ধরে। বসুন্ধরা কিংসে খেলার সময় বাসা থেকেই অনুশীলনে যেতাম। কিন্তু জাতীয় দলের ক্যাম্প একটু আলাদা। এই অভিজ্ঞতা আমাকে এগিয়ে দিয়েছে।’
শারীরিকভাবে শক্ত–সামর্থ্য সুমাইয়া খেলেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। কিন্তু সানজিদা–তহুরাদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য অনেক। অন্যরা বয়সভিত্তিক খেলে এলেও সুমাইয়া সরাসরি জাতীয় দলে ঢুকেছেন। এর ফলে অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে এখন নিতে হচ্ছে।
মা–বাবা ঢাকায় নেই। তবে সুমাইয়া কয়েক বছর ধরে ঢাকাতেই স্থায়ীভাবে থাকছেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেমিস্টার শেষ করেছেন। অবশ্য নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না। ফুটবল নিয়েই আছেন। ফুটবলেই মজেছেন সুমাইয়া।
আরও পড়ুন: তহুরার জোড়া গোলে সিঙ্গাপুরকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ