শনিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪

ভাড়া বৃদ্ধি খরচের বাড়তি চাপ ‘বাসাভাড়ায়’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দামসহ জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে এমনিতেই সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বাসাভাড়া বাড়ছে নতুন করে

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
ভাড়া বৃদ্ধি খরচের বাড়তি চাপ ‘বাসাভাড়ায়’

বাণিজ্য ডেস্ক।।

ঢাকার বাসিন্দারা অনেকেই নতুন বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ পেয়েছেন।  এতে ভাড়া বাসার বাসিন্দারা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ঢাকায় যে বাসাতেই থেকেছি, বছরের শুরুতে সবখানে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বাসা ভাড়া যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বেতন বাড়ছে না। আবার দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে গত বছর বাজার খরচও দফায় দফায় বেড়ে এমন পর্যায়ে গেছে—এখন আর পণ্যতালিকায় কাটছাঁট করারও জায়গা নেই। এ অবস্থায় নতুন করে বাসাভাড়া বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ওপর বেশ চাপ তৈরি হলো।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দামসহ জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে এমনিতেই সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বাসাভাড়া বাড়ছে নতুন করে। বছরের শুরুতেই এলাকাভেদে বাসাভাড়া বেড়েছে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও ফ্ল্যাটের আকারভেদে ভাড়া বেড়েছে ৫ হাজার টাকাও। যাঁরা ভাড়া বাসায় থাকেন, তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় মাস শেষে বাসাভাড়ায়।

সাধারণত মানুষের খরচের তুলনায় আয় বেশি বাড়লে তাতে খরচ বাড়লেও মানুষের তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু দেশে গত দেড় বছর মূল্যস্ফীতির চেয়ে মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে মাস থেকে প্রতি মাসে যত মূল্যস্ফীতি হয়েছে, এর চেয়ে কম হারে মজুরি বেড়েছে। গত নভেম্বরে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। তার বিপরীতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ মজুরি যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়।

রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বসিলা, পল্টন, বাড্ডা (সাতারকুল), মহানগর আবাসিক, মগবাজার, ইস্কাটন, বাংলামোটর, কাঁঠালবাগান ও পান্থপথ এলাকার ১২টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বছর শুরুর আগেই অনেক বাড়িওয়ালা বা ফ্ল্যাটমালিক বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে বাড়তি এ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া ফেডারেশন ও ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো বাসাভাড়া বাড়ানো হয়। সরকারও এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়। তাই ভাড়াটেদের সচেতনতা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।

আইন আছে, প্রয়োগ নেই

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে দেশে একটি আইন আছে। সেটি ১৯৯১ সালের। ভাড়াটেদের স্বার্থ রক্ষায় অনেক কথা উল্লেখ আছে এই আইনে। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। ১৯৯১ সালে করা এ আইন বাস্তবায়নে এখনো কোনো বিধি করেনি সরকার। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ কার্যকর করতে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) নামের একটি সংগঠন জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিল।

রিট আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে রুল ও চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই আদালত রায় দেন। রায়ে বলা হয়, বিদ্যমান আইনটি কার্যকর না হওয়ায় ভাড়াটেদের সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। আইনটি কার্যকরে রাষ্ট্রকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় সাধারণ মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ পাবেন না। রায়ে সারা দেশে এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি কিছুটা জটিল। তাই এর সমাধানও সহজ নয়। এ জন্য এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বিদ্যমান আইনটিও কার্যকর হয়নি। এটা কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।

 

আরও পড়ুন: গ্রামীণফোনে ৩০ টাকার নিচে রিচার্জ করা যাবে না

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net