৬৪
শামীম আরেফীন ।।
“তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।”
রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সর্বস্ব হারানো কৃষক উপেনের এই লাইনটা মনে আছে নিশ্চয়ই। উপেন কি সত্যি সত্যিই অত্যাচারী-দখলদারি রাজাকে ‘সাধু’ আর নিজেকে ‘চোর’ বলেছিলো? সে কি মেনে নিয়েছিলো যে সে আসলেই ‘চোর’? এটা কি স্বীকারোক্তি মূলক মন্তব্য ছিলো?
সেই উত্তর আপনারা জানেন। সঠিক উত্তর লিখেই তো পরীক্ষায় পাস করে আসছেন, তাই না! তাহলে এখন কেন এমন ভাণিতা করছেন যে আপনারা স্যাটায়ার বোঝেন না! দুঃখ-অসহায়ত্ব থেকে উঠে আসা বিদ্রূপাত্মক একটা স্লোগানকে কেন আক্ষরিক অর্থে বেঁধে দিয়ে অন্ধত্বের পরিচয় দিচ্ছেন?
একটা ঘৃণিত শব্দ যখন কেউ রাগে-ক্ষোভে নিজের গায়ে মেখে নেয়, তখন বুঝতে হবে সেটার অর্থ আর আক্ষরিক থাকে না। সেটা কোনো স্টেটমেন্টও হতে পারে না। তাই যদি হতো তাহলে “ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো” লেখার কারণে কবি রফিক আজাদ দেশদ্রোহী হয়ে যেতেন। কারণ তিনি দেশের মানচিত্র খেয়ে ফেলতে চেয়েছেন। “এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়” লেখার ফলে নবারুণ ভট্টাচার্যও দেশ অস্বীকারকারী হয়ে যেতেন।
আমি ভীষণ অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, আপনারা অনেক বড় জ্ঞানী-গুণী (!) অনেক বড় বুদ্ধিজীবীরা (!) একটা নির্দোষ ব্যঙ্গাত্বক স্লোগান শুনে ‘জাত গেলো জাত গেলো’ বলে কেমন চোখ-নাক-মুখ ঢাকা শুরু করলেন। এর কারণ কী? আসলেই মগজটা বিক্রি হয়ে গেছে? নাকি ক্ষমতার সামনে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটের ভয়?
ওদিকে আরেকটা দল, যাদের মাথাভর্তি পেটভর্তি কেবল রাজনীতি আর রাজনীতি, তারাও ঠিক একইভাবে স্লোগানের ভুল ব্যাখা করে হেলমেট-লাঠি-বন্দুক নিয়ে মাঠে নেমে গেলো তাদের উদ্দেশ্য সাধনে। কী অদ্ভুত!
আসলে এমনটাই তো হওয়ার কথা। একটা দেশের শিক্ষিত সমাজ যখন মুখে কুলুপ এটে বোবা-বধির হয়ে পড়ে থাকে, তখন সেই দেশের সকল নিয়ন্ত্রণ এভাবেই অযোগ্য কীটদের হাতে চলে যায়।
এটা মোটেই ভালো কিছু নয়! কারো জন্যেই ভালো কিছু নয়!