ঢাকাবার্তা ডেস্ক ।।
দুই বছর আগে সর্বশেষ ব্রাজিলে খেলতে গিয়ে না খেলেই ফিরে এসেছিল আর্জেন্টিনা। সেবার সাও পাওলোতে ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিট পর ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এজেন্সির (আনভিসা) কর্মকর্তারা মাঠে ঢুকে খেলা পণ্ড করেন। আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড়ের বিপক্ষে কোয়ারেন্টিন বিধিমালা ভাঙার অভিযোগে ম্যাচটি খেলতে দেননি তাঁরা। ভিন্ন কারণে আজ আবার ব্রাজিলের মাটিতে পণ্ড হতে বসেছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সুপার ক্লাসিকোর ম্যাচ। তবে এবার মারাকানার ম্যাচটিকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল গ্যালারির দাঙ্গা।
ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিট আগে গ্যালারিতে উত্তাপের সূচনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এই ম্যাচের লাইভ বিবরণীতে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম গ্লোবোর ধারাভাষ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত বাজার সময় ব্রাজিলের সমর্থকেরা দুয়ো দেওয়ায় ঝামেলার শুরু হয়।’ একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। লিওনেল মেসিসহ আর্জেন্টিনা দল ও মারকিনিওস গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। যদিও তাতে কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে সতীর্থদের নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান মেসি। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ম্যাচ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পর। যা শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয় আর্জেন্টিনার ১-০ গোলের জয়ে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জয়ে একমাত্র গোলটি করেন নিকোলাস ওতামেন্দি।
খেলায় কী হতে পারে, সে ইঙ্গিত অবশ্য দুই দল মাঠে নামার পরই পাওয়া যায়। মাঠে নামতেই কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। শুরুটা হয় রদ্রিগো ও মেসিকে দিয়ে। একটু পর অন্যরাও জড়িয়ে পড়েন। এমনকি খেলা শুরুর পরও একটুও কমেনি এর রেশ। ম্যাচটা যে গোলের এবং গোল করেই জিততে হবে, সেটি যেন ভুলেই গিয়েছিলেন খেলোয়াড়েরা।
ফাউল ও কার্ডের ছড়াছড়ি ছিল শুরু থেকেই। ফাউল ও কার্ড দেখায় যেমন ব্রাজিল এগিয়ে ছিল, তেমনি মাঠে বল পায়েও আধিপত্য ছিল ব্রাজিলেরই। ছোট পাস ও নান্দনিক কিছু ড্রিবলিংয়ে মাঝমাঠ ও অ্যাটাকিং থার্ডে ভীতি ছড়িয়েছেন রদ্রিগো-জেসুসরা। অন্য দিকে ম্যাচ শুরুর আগের ঘটনায় কিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার খেলায় ছিল না পরিকল্পনার কোনো ছাপ।
ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় একক প্রচেষ্টায় চমকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাফিনিয়া। তবে রেফারি অফসাইডের পতাকা তোলায় থামতে হয়। ম্যাচের ৬ মিনিটে ‘রিবাউন্ড’ থেকে বল পান জেসুস। চেষ্টা করেন রদ্রিগো দি পলকে ড্রিবল করে এগিয়ে যেতে, কিন্তু তাঁর হাত গিয়ে লাগে দি পলের মুখে। ফলাফল ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন জেসুস। এ ঘটনায় দুই দলের মধ্যে আবার ছড়িয়ে পড়ে উত্তাপ। এর মধ্যেও অবশ্য ব্রাজিল চেষ্টা করে আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরি করতে। তবে ১৩ মিনিটে দি পলকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রাফিনিয়া। প্রথম ১৮ মিনিটে এদিন ব্রাজিল ফাউল করে ৮টি।
৩৭ মিনিটে বক্সের কাছাকাছি জায়গায় ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। রাফিনিয়ার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। প্রথমার্ধের শেষ দিকে গিয়ে আর্জেন্টিনা বক্সের কাছাকাছি জায়গায় বেশ হুমকি তৈরি করেন রদ্রিগো-জেসুসরা। ৪৪ মিনিটে মার্তিনেল্লির শট মার্তিনেজকে পেরিয়ে গেলেও গোললাইনের কাছাকাছি জায়গা থেকে ক্লিয়ার করেন এক আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধে সব মিলিয়ে ২২টি ফাউল করেছে দুই দল। যেখানে ব্রাজিলের ১৬টি ফাউলের বিপরীতে আর্জেন্টিনার ফাউল ছিল ৬টি।
দ্বিতীয়ার্ধেও আর্জেন্টিনার অর্ধে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে ব্রাজিল। একাধিকবার আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরিরও চেষ্টা করেছে তারা। যদিও রক্ষণদেয়াল ভাঙতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে মার্তিনেল্লির প্রচেষ্টা মার্তিনেজ দারুণভাবে ঠেকিয়ে না দিলে ম্যাচের প্রথম গোলটি পেয়েই গিয়েছিল ব্রাজিল। তবে খেলার ধারার বিপরীতে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
লো সেলসোর কর্নার থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন নিকোলাস ওতামেন্দি। এরপর ম্যাচের ৭৮ মিনিটে নিষ্প্রভ মেসিকে তুলে নিয়ে আনহেল দি মারিয়াকে নামায় আর্জেন্টিনা। ৮১ মিনিটে ব্রাজিলের বিপদ আরও বাড়ে জেয়েলিংটন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে। ১০ জনের ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। বাছাই পর্বে টানা তৃতীয় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ল ব্রাজিল। এদিন গোলে পিছিয়ে থাকলেও ফাউলে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার ১৬ ফাউলের বিপরীতে ব্রাজিল ফাউল করেছে ২৬টি।
৬ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে আর্জেন্টিনা। ৬ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয়ে নেমেছে ব্রাজিল। অন্য ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে দারউইন নুনিয়েজের জোড়া গোলে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে উরুগুয়ে। প্যারাগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়েছে কলম্বিয়া। ইকুয়েডরের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে চিলি। ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে উরুগুয়ে। সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে কলম্বিয়া।৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ইকুয়েডর।