মেহেদী হাসান পলাশ ।।
যত্রতত্র মাদ্রাসা করার আমি ঘোর বিরোধী। বিশেষ করে যাদের মাদ্রাসা পরিচালনা করার সামর্থ্য নেই তাদের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা অনুচিত। বর্তমানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা কিছু মানুষের কাছে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এরা নিজ উদ্যোগে অথবা সমাজের বিত্তশালী কোন মানুষকে পূণ্যের লোভ দেখিয়ে বা অন্য যেকোনভাবে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার পর শিক্ষক ও ছাত্রদের অনেকটা ভিক্ষুকের মতো বাড়ি বাড়ি পাঠায় পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের চাঁদা তোলার জন্য। আর মাদ্রাসার মালিক বা সিনিয়র শিক্ষকগণ ঘন ঘন বিদেশ সফরে যান এই মাদ্রাসা পরিচালনার ব্যয় সংগ্রহের জন্য প্রবাসী, বিদেশী মুসলিম ব্যক্তি ও সংস্থার দান সংগ্রহের জন্য। এভাবে সংগৃহীত অর্থ থেকে কমিশন বাদেও তাদের বিমান ভাড়া, হোটেল খরচ ও সামগ্রিক যাতায়াত ব্যয় নির্বাহ করা হয়। প্রশ্ন হল, আপনার যদি মাদ্রাসা পরিচালনা করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে আপনাকে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে কেন?
এই যে মাদ্রাসা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে দান সংগ্রহ করা হয়, শুরুতেই তার কমবেশি ৫০% টাকা কমিশন আকারে মাদ্রাসা মালিক ও পরিচালনাকারীরা কেটে রাখে। যেহেতু মাদ্রাসা পরিচালনা ব্যয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নেই, সে কারণে বাকি ৫০% টাকা থেকেও এই মাদ্রাসা মালিক ও পরিচালকেরা যাচ্ছেতাই ভাবে বিল করে টাকা তছরুপ করে থাকে। এ কারণে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এখন একশ্রেণীর আলেমদের কাছে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এবং এই আর্থিক দুর্নীতি ও স্খলনের কারণেই আমাদের দেশের আলেমসমাজের নৈতিক মানের চরম অবনতি ঘটেছে। ফলে প্রতিবাদী মানসিক শক্তি হারিয়ে তারা একটি সুবিধাবাদী ও আপোষকামী মনোভাবের মধ্য দিয়ে জীবন নির্বাহ করছে।
তবে শিক্ষামন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছে তার সাথে আমি প্রবলভাবে দ্বিমত করি। উন্নত বিশ্বে যেমন যত্রতত্র মার্কেট বা শপিং সেন্টার খোলা না গেলেও বাংলাদেশ যেখানে সেখানে মার্কেট শপিং সেন্টার বা দোকান করা যায়। এবং লোকজন সেটা করছেও। কিন্তু দোকান করলেই সব দোকানে ক্রেতারা যায় না। ক্রেতাগণ পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু মানদণ্ড বিবেচনায় দোকান নির্বাচন করে থাকে। ঠিক তেমনি যত্রতত্র মাদ্রাসা, স্কুল বা কিন্ডার গার্টেন খুললেই একজন অভিভাবক সেখানে তার সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠান না। একজন অভিভাবক তার সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মানদণ্ড বিবেচনা করেন এবং সেই বিবেচনার ভিত্তিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি স্কুল, কিন্ডার গার্ডেন নাকি মাদ্রাসা হবে নির্বাচন করেন। সন্দেহ নেই পণ্য ক্রয়ের চেয়ে সন্তানের শিক্ষা দান একজন মানুষের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিরিয়াস বিষয়।
আমার মতে , যত্রতত্র মাদ্রাসা খোলার কারণে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমেনি বরং কমেছে স্কুলে পড়াশোনার মান পড়ে যাওয়ার কারণে। ফি বছর পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন এবং পাঠদান নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষায় সাধারণ অভিভাবকদের মাঝে স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদেরকে প্রাইমারি পর্যায়ে সরকারি স্কুলের পরিবর্তে কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসাতে পাঠানো শ্রেয়তারা মনে করেন। মাদ্রাসার মতো যত্রতত্র এই দেশে কিন্ডার গার্টেনও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় কিন্ডার গার্টেন এর কথা বলেননি। এছাড়াও অনেক মাদ্রাসাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্কুলিং ব্যবস্থা আছে। ফলে অনেক কর্মজীবী পিতা-মাতা তার সন্তানকে কর্ম ক্ষেত্রে যাওয়ার পথে মাদ্রাসায় দিয়ে যায় এবং ফেরার সময় মাদ্রাসা থেকে বাসায় নিয়ে আসে। মূলত তারা মাদ্রাসাকে পড়াশোনার পাশাপাশি ডে কেয়ার সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে। ধর্মীয় শিক্ষাটা বোনাস হিসেবে পাওয়া যায়। এছাড়াও বর্তমান যুগ- জামানা ও সামাজিক নানা বিচ্যুতি বিবেচনায় অনেক অভিভাবকগণ তার সন্তানের মধ্যে শিশুকালেই ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে প্রাইমারি পর্যায়ে সন্তানকে মাদ্রাসাতে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে আমার অভিমত।
(মেহেদী হাসান পলাশের ফেসবুক পোস্ট)