ঢাকাবার্তা ডেস্ক।।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছে, ক্ষমতাসীন দলের একটা অংশ সড়ক পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করছে। এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির ভাষ্য, দেশে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো বিভিন্ন কমিটি গঠন ও সুপারিশমালা তৈরির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্তমানে সড়ক পরিস্থিতিতে বোঝা যায়, দেশে সড়ক নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তা পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এবং রোড সেফটি ওয়াচ ডটকম। ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চরমভাবে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগই ঠিকমতো আলোর মুখ দেখছে না। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগই যথেষ্ট মাত্রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে জনগণ যেমন সচেতন হচ্ছে না, তেমনি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।
সড়ক পরিবহন খাতে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রয়েছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই গোষ্ঠীই সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা। তারা নানা অজুহাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের লোকজন সড়ক পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে।
প্রকল্প পর্যাপ্ত সমীক্ষা হয়নি
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে রাজধানীর গণপরিবহন ৫৩ শতাংশ যাত্রী বহন করে আর ব্যক্তিগত গাড়ি ১১ শতাংশ যাত্রী বহন করে। অথচ সড়কে ৭০ শতাংশের বেশি জায়গা দখল করে চলে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা। যানজটের কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। রাজধানীতে এখন ১৩ লাখের বেশি মোটরসাইকেল চলে। রিকশার হিসাব কেউ জানে না।
রাজধানীর যানজট কমাতে প্রকল্প নেওয়ার আগে পর্যাপ্ত সমীক্ষা করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। বলা হয় রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ইউলুপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও রাজধানীর যানজট কমছে না, বরং বাড়ছে। রাজধানীতে যে পরিমাণে মানুষের চাপ বাড়ছে, তাতে মেট্রোরেল ও সাবওয়ে রাজধানীর যানজট খুব বেশি কমাতে পারবে না। রাজধানীতে ৪ হাজার আধুনিক নতুন বাস নামানোর পরামর্শ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের। সংগঠনটি বলছে, এতে ব্যয় হবে মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা।
সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৫ হাজার ৯২৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ হাজার ১ জন। আহত হয়েছেন ৪২ হাজার ৩৮৮ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৯ হাজার ৩০৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারী ছিলেন ৭ হাজার ৬৬৫ আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৯৬।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কমিটি করা হয়, সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু যথারীতি এসবেরও কোনো বাস্তবায়ন হয় না। সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কমিটি গঠন ও সুপারিশমালা তৈরির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
‘অনেকেই সহযোগিতা পাবেন না’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭৯ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর ফলে দেশে আর্থসামাজিক-সংকট তৈরি হচ্ছে। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। দুর্ঘটনায় আহত সদস্যের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে তহবিল-সংকটের কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সহযোগিতা পাবেন না। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে এই ফান্ড থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ। আবেদন করা, পুলিশি তদন্ত ও প্রতিবেদন জমা হওয়া, যাচাই-বাছাই ইত্যাদি করতে অনেক সময় কেটে যাবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ‘ইন্ডিপেনডেন্ট ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তারা বলছে, এই ফান্ডে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি টাকা হলেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সম্ভব। ইন্ডিপেনডেন্ট ফান্ড গঠিত হলে সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আহত রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
আরও পড়ুনঃ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ করার দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির