মহাকাশ ডেস্ক।।
বছরব্যাপী মিশনের পর সফলভাবে শেষ হয়েছে স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীতে সৌর শক্তি পাঠানোর এক যুগান্তকারী পরীক্ষা। স্পেস সোলার পাওয়ার ডেমনস্ট্রেটর (এসএসপিডি-১) নামের প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল সূর্য থেকে শক্তি সংগ্রহ ও সেটি তারবিহীনভাবে পৃথিবীতে পাঠানোর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা যাচাই।
প্রকল্পটি গত বছরের ৩ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র (ক্যালটেক) বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তারা একটি নতুন সৌর প্যানেল গঠন করেন যেটির অনুপ্রেরণা এসেছে ‘অরিগামি’ থেকে। এতে ছিল ভিন্ন নকশার সৌরকোষ ও একটি মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিটার।
ক্যালটেক বলেছে, মিশনের সাফল্য ‘মহাকাশের সৌর শক্তির ভবিষ্যত নির্ধারণে সহায়তা করবে’। তবে, এটি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে আরও অনেক গবেষণা দরকার বলেও জানিয়েছেন তারা। ‘বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ থেকে সৌর শক্তি পৃথিবীকে আলোকিত করার বিষয়টি এখনো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।’ – বলেন ক্যালটেকের প্রেসিডেন্ট ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক টমাস রোসেনবাউম। ‘কিন্তু এই জটিল মিশনটি দেখিয়ে দিয়েছে এই ভবিষ্যত অর্জন করা সম্ভব।’
এ ধরনের মহাকাশভিত্তিক সৌর শক্তি তৈরি করে পৃথিবীতে পাঠানোর প্রথম কল্পনা করা হয়েছিল ৫০ বছরেরও আগে। বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন এই ধরনের প্রকল্প মেঘ বা সূর্যের চক্রের কারণে আটকে থাকে না।
গত বছর, জাপানি মহাকাশ সংস্থা ‘জাক্সা’ ঘোষণা করে, তারা ২০২৫ সালের মধ্যে মহাকাশে একটি বাণিজ্যিক সৌর উৎপাদন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, নিজেদের ‘সোলারিস’ কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ। জাক্সা প্রথম ২০১৫ সালে মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুত তৈরি করতে সফল হয়েছিল। সংস্থাটি ৫৫ মিটার দূরের একটি রিসিভারে এক দশমিক আট কিলোওয়াট শক্তি পাঠাতে পেরেছিল। এই পরিমান বিদ্যুতে একটি কেতলির পানি গরম করা সম্ভব। তবে, সম্প্রতি বিভিন্ন পরীক্ষা ‘ফটোভোলটাইক সেল’(একটি যন্ত্র যা সূর্যের আলোকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে) ব্যবহার করে সৌর শক্তি সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার প্রথম সফল নিদর্শন।
‘মহাকাশ পরীক্ষাটি মৌলিক ধারণার শক্তি দেখিয়েছে, যা দুটি অসঙ্গতি সত্ত্বেও আমরা সফলভাবে এটি স্থাপন করতে পেরেছি,’ বলেছেন ক্যালটেকের মহাকাশ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক সার্জিও পেলেগ্রিনো।
‘সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটি আমাদের অনেক নতুন বিষয় শিখিয়েছে।’
গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এটি বাণিজ্যিক উপায়ে চালু হওয়ার আগে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ব্যবহৃত পণ্যের খরচ কমানো ও মহাকাশের উচ্চ বিকিরণ থেকে প্যানেলগুলিকে রক্ষা করা। গত বছর ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কীভাবে একটি অতি-হালকা সৌর কোষের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়, যা সম্ভাব্য মহাকাশভিত্তিক সৌর কারখানায় ব্যবহার করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এক ধরনের স্ব-নিরাময় সৌর প্যানেল তৈরি করেছেন। এটি মহাকাশ বিকিরণের ক্ষতি নিজে নিজেই ঠিক করে, কাজের ক্ষমতা শতভাগ পুনরুদ্ধার করতে পারে।
আরও পড়ুন: