খেলা ডেস্ক।।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ৪৮ ওভারে ২৫৬/৮ (শরীফুল ০৭*, মুস্তাফিজ ০২*)
ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচ জিতে উড়ছে ভারত। বাংলাদেশ অবশ্য প্রথম ম্যাচ জিতলেও টানা দুটি ম্যাচ হেরে আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে। আত্মবিশ্বাস ফেরাতে আজ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। কিন্তু টসের মুহূর্তে বড় দুঃসংবাদ দিয়েছে তারা। ইনজুরিতে আজ খেলা হচ্ছে না অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। তবে পুনের ব্যাটিং বান্ধব পিচে টসটা বাংলাদেশ ঠিকই জিতেছে। শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একাদশে দুটি পরিবর্তন বাংলাদেশের। সাকিব না থাকায় তার জায়গায় একাদশে ঢুকেছেন আরেক বাঁহাতি নাসুম আহমেদ। নেই তাসকিন আহমেদও। তার জায়গায় হাসান মাহমুদকে নেওয়া হয়েছে। ভারত অবশ্য প্রত্যাশিতভাবে একাদশে কোনও পরিবর্তন আনেনি।
শরিফুলের শেষ ছক্কায় ভারতকে ২৫৭ রানের লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ
যশপ্রীত বুমরাকে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা শরীফুল ইসলামের। ইনিংসের শেষ বলে। বাংলাদেশ তাতে গেছে ২৫৬ রান পর্যন্ত। সেটিও শেষ ৫ ওভারে ৪৬ রান তোলার পর। তাতে বড় অবদান মাহমুদউল্লাহর ৪৬ রানের ইনিংসের। ২০১ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকুর রহিম আউট হওয়ার পর এ স্কোরকেও মনে হচ্ছিল বেশ দূরে।
তবে শুরুটা আজ দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। তানজিদ হাসান ও লিটন দাসের ৯৩ রানের ওপেনিং জুটির পর অবশ্য পথ হারায় তারা। ৯৩/০ থেকে ১৩৭/৪—মূল ক্ষতিটা হয়েছে সেখানেই। লিটন, মুশফিকও আউট হয়েছেন অসময়ে। ছন্দে ছিলেন না চারে আসা মিরাজ বা তাওহিদ।
উইকেট বেশ ভালোই ব্যাটিংয়ের জন্য। এমন উইকেটে ২৫৬ রানের সম্বল নিয়ে ভারতকে আটকানো সহজ হওয়ার কথা নয় মোটেও। তবে এ টুর্নামেন্টে রান তাড়া তেমন সহজ হচ্ছে না। তবে লড়াইয়ে থাকতে গেলে দ্রুত উইকেট দরকার—সেই পুরোনো চাহিদাপত্রই আরেকবার বাংলাদেশ বোলারদের সামনে।
জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচে থামলেন মুশফিক, নাসুমকে ফেরালেন সিরাজ
রবীন্দ্র জাদেজা কেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার, সেটিই দেখালেন তিনি। আর তাতেই যশপ্রীত বুমরা পেলেন প্রথম উইকেট। শর্ট লেংথের বলে কাট করেছিলেন মুশফিক। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ডান দিকে লাফিয়ে জাদেজা নিয়েছেন দুর্দান্ত ক্যাচ। দারুণ বোলিংয়ের পর দারুণ ক্যাচ—জাদেজা শো!
৪৬ বলে ৩৮ রান করা মুশফিকের আউটে আরেকটি বড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। বুমরার এরপর বাকি আরও ৩টি ওভার, মনে রাখতে হবে সেটিও।
প্রথম চারটি মেরেছিলেন টেনে, তাতে একটু হাত লাগিয়ে আঘাতও পান সিরাজ। দুটি ডট পেরিয়ে কাভারের গ্যাপে আরেকটি চার মারার পর নাসুম আহমেদ থেমেছেন, শর্ট লেংথের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে।নাসুম করেছে ১৪ রান ১৮ বলে।
লিটনকেও ফেরালেন জাদেজা
বড় বাউন্ডারি খেলতে গিয়ে আউট হলেন লিটন দাস। লিটনকে স্পিনের ঘূর্ণিতে ক্যাচের শিকার করলেন জাদেজা। ক্যাচ ধরলেন শুভমান গিল। ডাগআউটের পথের হাটার আগে লিটন করেছিলেন ৬৬ রান।
মাঠে এসেছেন মুশফিকুর রহিম
শান্ত আউট, সিরাজের শিকার মিরাজ,
নাজমুল আর থিতু হতে পারলেন না। সতর্ক শুরু করেছিলেন, কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ১৭ বলে ৮ রান করেই থামতে হলো বাংলাদেশ অধিনায়ককে। ব্যাকফুটে গিয়ে আড়াআড়ি খেলার চেষ্টা সফল হয়নি এ বাঁহাতির। তিনিও রিভিউ করেননি। অবশ্য লাভ হতো না এবারও।
তানজিদ ফেরার পর থেকেই ছন্দপতন হয়েছিল। এর মধ্যেই বাংলাদেশ হারাল আরেকটি উইকেট।
চারে এসেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না মিরাজ। তাঁকে মুক্তি দিলেন সিরাজ। ১৩ বলে ৩ রান করে ডাউন দ্য লেগের বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন চারে আসা মিরাজ, উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। নিজের বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন রাহুল।
মিরাজকে আজ চারে পাঠানোর পেছনে কারণ কী, সেটি অবশ্য নিশ্চিত নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এমনই হচ্ছে!
তানজিদ প্রথম ফিফটি করে ফিরলেন
সর্তক শুরুর পর সপ্তম ওভারে এসে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন তানজিদ তামিম। পরে তার সঙ্গী হন লিটন দাস। তাতে শুরুর ঘাটতিটাও পূরণ হয়ে যায় বাংলাদেশের। নবম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে টানা দুটি চার মেরেছেন লিটন। অবশ্য এই ওভারেই তৃতীয় ডেলিভারির পর পায়ে আঘাত পান হার্দিক। তিনটি বল করতে পারলেও পা মচকে যাওয়ায় ওভার অসম্পূর্ণ রেখে মাঠ ছেড়ে গেছেন। তার বদলে ওভার শেষ করেছেন কোহলি। তার পর ঠাকুরের দশম ওভারে তানজিদ দুটি ছক্কা ও এক চার মারলে পাওয়ার প্লেতেই ওপেনিং জুটিতে স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ৬৩ রান। যা বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে কোনও প্রতিপক্ষের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি, ৪১ বলে। সেটিও বিশ্বকাপে। প্রতিপক্ষ ভারত। তানজিদ হাসানের স্মরণীয় দিন। শার্দুল ঠাকুরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করলেন এ বাঁহাতি ওপেনার।
ড্রিংকসের পরই কি মনোসংযোগে ব্যঘাত ঘটল তানজিদের?
কুলদীপ যাদবকে সুইপের চেষ্টা করেছিলেন। তবে ফ্ল্যাট বলটির লাইন মিস করে গেছেন পুরোপুরি। ৪৩ বলে ৫১ রান করে এলবিডব্লিউ তানজিদ, রিভিউও করেননি। সেটি করলে লাভও হতো না। ভারত পেয়েছে কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রু। ৯৩ রানে ভেঙেছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি।
বাংলাদেশ একাদশ
লিটন দাস, তানজিদ হাসান, নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।
ভারত একাদশ
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুবমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, শার্দুল ঠাকুর, যশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব ও মোহাম্মদ সিরাজ।
এক নজরে বাংলাদেশ-ভারত পরিসংখ্যান
দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে দুই দলের লড়াই ক্ল্যাসিক দ্বৈরথে পরিণত হয়েছে। দুই দলের ম্যাচে থাকে লড়াইয়ে ঝাঁজ। অনেক সময় জন্ম দেয় স্নায়ী ক্ষয়ী মুহূর্তেরও। তবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একবারই ভারতকে হারাতে পেরেছিল। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল সাকিব-তামিমরা। এরপর ২০১১, ২০১৫, ২০১৯ তিনটি আসরেই শেষ হাসি ভারতের। এখন পর্যন্ত ৪০ বারের দেখায় ভারতের জয় ৩১ ম্যাচে, বাংলাদেশের আটটি। তবে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ চার ওয়ানডেতে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে সাকিব আল হাসানরা।
আরও পড়ুনঃ ‘সাকিব চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার, এতে আসলে আমাদের কিছু যায়-আসে না’