বিশেষ প্রতিনিধি ।।
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে কোনো প্রকার সুরক্ষা দেবে না বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হন কেউ, আমরা তাকে প্রোটেকশন দিতে যাব কেন? তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন।”
“ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে, অপকর্ম করতে পারে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোনো প্রকারে, সরকারের কাউকে প্রোটেকশন দেওয়ার বিষয় নেই।”

কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুরে মেজর সিনহা হত্যার ঘটনাস্থলে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ (বামে) ও পুলিশের তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। ৫ আগস্ট ২০২০।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত, দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে- এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে কি না জানতে চাইলে শুক্রবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার একটি আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছে।
চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে বেনজীরের ওপর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে গত সোমবার গুরুতর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, তাঁর তিন ভাই ও পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কারও অপকর্মের দায় না নেওয়ার ঘোষণা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন সময় এলো যখন দলটির একজন সংসদ সদস্য ভারতে গিয়ে খুন হওয়ার পর তাঁর আন্তঃদেশীয় সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ দলটিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
সাবেক পুলিশ প্রধানের সম্পদ জব্দ
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের যথাযথ তদন্তের সুবিধার্থে তাঁর ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ৩৩টি আর্থিক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে।
এছাড়া, কক্সবাজার ও গোপালগঞ্জ জেলার ৮৩টি দলিলের অধীনে সাবেক এই পুলিশ প্রধানের সম্পত্তিও জব্দ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “আদেশে আদালত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ২৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দিয়েছে; যাতে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এসব অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে না পারেন।”
তিনি বলেন, “বেনজীরের জমি যাতে হস্তান্তর করা না যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আদালত গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া এবং কক্সবাজারের টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাব-রেজিস্ট্রারদের নির্দেশ দিয়েছে।”

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ (বামে) ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। ৫ আগস্ট ২০২০।
বেনজীরের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কয়েকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল দুদক বেনজীরের সম্পদের বিষয়ে একটি অনুসন্ধান শুরু করে।
সেই অনুসন্ধানের স্বার্থেই দুদক আদালতে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের উদ্যোগ নেয় বলে জানান খুরশিদ আলম খান।
প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর ফেসবুক লাইভে বেনজীর দাবি করেন, তাঁর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বেনজীর ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী সুপার হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় তিনি পুলিশের আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বেনজীরের সম্পদ ক্রোকে দুদকের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ করার যে আদেশ আদালত দিয়েছে, তা জনগণ প্রত্যাশা করে।”
আদালত ও দুদকের এই ভূমিকার ফলে মানুষের সংশয় কিছুটা হলেও কেটেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন “অভিযুক্তের পদ ও ক্ষমতা বিবেচনা না করেই তদন্ত করতে হবে দুদককে।”