হামীম কেফায়েত ।।
‘ছেড়ে দাও শরৎ, ছেড়ে দাও, আর মেরো না, প্লিজ শরৎ, ছেড়ে দাও, ও মরে যাবে, প্লিজ শরৎ।’ কে মরে যাবে; কাকে ছাড়তে বলছে; শরৎ কাকে ছাড়বে; শরৎ, জবা, বেলী; কে কাকে ছেড়ে দেবে? এইসব কিছু স্পষ্ট হবে আগামী সেপ্টেম্বরে; দেশের দর্শকপ্রিয় অলরাউন্ডার অভিনেত্রী কুসুম শিকদারের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ ‘শরতের জবা’য়।
শিল্পের নানা অলি-গলি পেরিয়ে পরিচালনার রাজপথে কুসুম শিকদার। দুই বছর আগে তার এই যাত্রার শুরু। তবে এই যাত্রার আড়ালে রয়েছে আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক এক অনবদ্য গল্প।

কুসুম শিকদার
কুসুমের লেখা ২০১৭ সালে ‘শরতের জবা’ নামে গল্পটি ডেইলি স্টারের ঈদসংখ্যায় সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো, সেটি বইবদ্ধ হয় ২০২১- এ। আর তখন থেকেই লাক্সসুন্দরীর কাছে আসতে থাকে অবিরত অনুরোধ-উপরোধ। সাহিত্যে কুসুমের হাঁটাচলাও নিবিড়; ২০১৫ সালে বইমেলায় কবিতার বই ‘নীল ক্যাফের কবি’ প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশনী। আর প্রথম সে বইয়েই সম্মানিত হয়েছিলেন ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’-এ।
শূন্য দশকের প্রারম্ভেই সৌন্দর্যের আত্মবিশ্বাসী যাত্রার পর গান, কবিতা, নাটক, গল্প আর অভিনয়ের যে অভিযাত্রায় নাম লিখিয়েছেন কুসুম, তিনিই এবার হাল ধরেছেন চলচ্চিত্রের। প্রিয়জন আর সমালোচকদের প্রত্যাশা এবার প্রদর্শিত হবে পর্দায়। দেখা যাবে কুসুম শিকদারের পরিচালনায় প্রথম সিনেমা ‘শরতের জবা’।

কুসুম শিকদার
ঢাকাবার্তার সঙ্গে আলাপে এই ‘২০০২ লাক্স-আনন্দধারা ফটোজেনিক চ্যাম্পিয়ন’ জানান, তার এই মুহূর্তের ব্যস্ততা ‘শরতের জবা’ ঘিরে।
সুকণ্ঠী এই পরিচালক বলেন, ‘এই মুহূর্তে ‘শরতের জবা’ নিয়ে ব্যস্ত।’
১৯৭০ সাল থেকে মানজান আরা বেগম (রেবেকা), জাহানারা ভূঁইয়া, রোজী আফসারী, সুজাতা, সুচন্দা, কবরী, মৌসুমী, সামিয়া জামান, রোজিনা, শামীম আকতার, চয়নিকা চৌধুরী, শাহনেওয়াজ কাকলী, নারগিস আক্তার, রওশন আরা নিপা ও রুবাইয়াত হোসেনরা আসেন বাংলা সিনেমা নির্মাণে। যদিও পরিচালনায় নিজের যাত্রা নিয়ে বিনয়বত কুসুম শিকদার। বললেন, ‘শূন্য থেকে শুরু করায় সেন্সরশিপ পর্যন্ত আসার এই যাত্রায় অনেক কিছু শিখেছি। বলা যায়– ট্রেনিং এবং লার্নিং দুইটাই হয়েছে আমার ‘শরতের জবা’র এই লং প্রসেসসেই।’
‘শরতের জবা’ গল্পটি ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত ‘অজাগতিক ছায়া’ গ্রন্থে স্থান পায়। পরের বছর একুশে বইমেলায় দ্বিতীয় সংস্করণ আসে। গল্পটি সম্পর্কে কুসুমের ভাষ্য, সাসপেন্স-থ্রিলার, একটু ভৌতিক-অতিপ্রাকৃতিক। আমার সিনেমায় সেই রিফ্লেকশন থাকবে। ‘গহিনে শব্দ’, ‘লাল টিপ’, ‘শঙ্খচিল’-এর মতো সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়িকার অভিষেক এবার বড়পর্দার নির্মাণে। আত্মপ্রকাশ করছেন পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে।

কুসুম শিকদার
নিজের সিনেমার নির্মাণ নিয়ে কুসুমের মন্তব্য, ‘প্রযোজনা, পরিচালনা, চিত্রনাট্য, সংলাপ, কাহিনি, অভিনয় এবং পোস্ট প্রোডাকশন ভীষণ জটিল, সময়সাপেক্ষ। সব কাজ একা আমার কাঁধেই ছিলো। এখন বাকিটা দর্শক এবং আপনাদের সবার উপর।’
এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী তার বিগত শিল্পনির্মাণ নিয়েও ঔদার্য্যের পরিচয় দিয়েছেন। ‘নীল ক্যাফের কবি’ কবিতার বইয়ের মতো ‘নেশা’ ছড়িয়েছেন গীতিকাব্যেও। গান, গল্প, কবিতা বা নিজের প্রিয় ভ্রমণ–সবকিছুর চেয়ে কুসুমের মনোযোগ এখন ‘শরতের জবা’য়; তরুণ এই সিনে-নির্মাতার ভাষ্য, ‘একজন নারী এই সমস্ত কাজ একা করতে পেরেছে তার ফ্যামিলি এবং টিমের সাপোর্টের কারণেই। খুব সহজ কোনো কিছুই ছিলো না। এমনকি এখনো কিছু যুদ্ধ বাকি। নো রিস্ক নো গেইন।’

কুসুম শিকদার
শরতের জবার শুটিং হয়েছে নড়াইলে। সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, অভিনেতা ইয়াশ রোহান, নিদ্রা দে নেহা, জিতু আহসান, শহীদুল আলম সাচ্চু এবং পরিচালক কুসুম শিকদার।
ইতোমধ্যে সেন্সর সেন্সর সনদ পাওয়া সিনেমাটি নিয়ে ভীষণ উচ্ছসিত কুসুম, এখন প্রচারণায় দর্শকদের সামনে আসতে চান। তার ভরসাও বিপুল। ঢাকা বার্তাকে বললেন, ‘দর্শক- শ্রোতা আমাকে ভালোবাসেন আমার কাজের জন্য। মূলত আমার অভিনয়ের জন্য, আবার আমার গান কিংবা লেখার ভক্তও আছেন অনেকে। তাই আমি কখনোই চাইনি আমার পেশাগত জীবনকে ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতে।’

শঙ্খচিলের শুটিংয়ে কুসুম শিকদার, প্রসেনজিৎ ও গৌতম ঘোষ।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলেন লাক্সসুন্দরী। তার সহাস্য জবাব, ‘আমার বিবাহ প্রেম, বন্ধুত্ব, পরিবার- এগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত। এগুলো অলওয়েজ আমি লো প্রোফাইল রেখেছি সচেতনভাবেই।’
অন্দরমহলে আলোচনা আছে, সিনেমার বিষয়ে সিরিয়াস হলেও আগামী মাসে আসবে কুসুমের নতুন মিউজিক ভিডিও।
ছবি : কুসুম শিকদারের সৌজন্যে