শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

সুরা ইউসুফে মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা নিহিত রয়েছে

সুরা ইউসুফের মর্মবস্তু হলো ধৈর্যের সুফল। এ সুরায় মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা নিহিত রয়েছে

by ঢাকাবার্তা ডেস্ক
সুরা ইউসুফে মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা নিহিত রয়েছে

পবিত্র কোরআনের ১২তম সুরা ইউসুফে মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা নিহিত রয়েছে। সুরা ইউসুফ পবিত্র নগরী মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১১১। রুকু ১২টি।  এ সুরায় ধারাবাহিকভাবে হজরত ইউসুফ (আ.)–এর জীবনকথা বর্ণনা করা হয়েছে। তা থেকে আমরা আল্লাহর মহিমা সম্পর্কে জানতে পারি এবং আমাদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।

সুরা ইউসুফের মর্মবস্তু হলো ধৈর্যের সুফল। এ সুরায় মানবজাতির জন্য বিশেষ নির্দেশনা ও শিক্ষা নিহিত রয়েছে।

হজরত ইয়াকুব (আ.)–এর ১২ ছেলে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হজরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন অতি রূপবান। তাঁর স্বভাবও ছিল অপূর্ব। ইউসুফ (আ.)–এর প্রতি হজরত ইয়াকুব (আ.)–এর ভালোবাসা ছিল প্রকাশ্য। এ কারণে ভাইয়েরা তাঁকে হিংসা করতেন। একবার খেলাধুলার কথা বলে ভাইয়েরা তাঁকে কুয়ায় ফেলে দেন। পরে কুয়ার পাশ দিয়ে একটি কাফেলা যাওয়ার সময় তারা পানি নেওয়ার জন্য তাতে বালতি ফেললে ভেতর থেকে ইউসুফ (আ.) বের হয়ে আসেন।

কাফেলার লোকেরা ইউসুফ (আ.)–কে বিক্রি করে দেন। মিসরের এক মন্ত্রী তাঁকে কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। ইউসুফ (আ.) যৌবনে পদার্পণ করলে মন্ত্রীর স্ত্রী জোলেখা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেন। ইউসুফ (আ.) তাঁর প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করেন। এ ঘটনার পরম্পরায় ইউসুফ (আ.)–কে জেলে বন্দী করা হয়।

জেলখানায় ইউসুফ (আ.) তাওহিদের দাওয়াত দেন। বন্দীরা তাঁকে সম্মান করত। সে সময় মিসরের বাদশাহ একবার স্বপ্ন দেখেন। বাদশাহর সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেন না। কিন্তু জেলবন্দী ইউসুফ (আ.) অর্থপূর্ণভাবে সে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেন। বাদশাহ এতে সন্তুষ্ট ও উপকৃত হন। ইউসুফ (আ.)–কে তিনি দেশের খাদ্যভান্ডার, ব্যবসা-বাণিজ্য তদারক করার জন্য উজির পদে নিয়োগ করেন।

কিছুদিন পর মিসর ও আশপাশে প্রবল দুর্ভিক্ষ হয়। ইউসুফ (আ.)–এর দুর্ভিক্ষপীড়িত ভাইয়েরা ত্রাণ নিতে মিসর আসেন। ভাইদের সঙ্গে কয়েকবার সাক্ষাতের পর ইউসুফ (আ.) নিজের পরিচয় দিয়ে তাঁদের বলেন, ‘আমি তোমাদের ভাই ইউসুফ।’ এরপর তাঁরা মা–বাবাসহ মিসরে বসবাস করতে থাকেন।।

পবিত্র কোরআনের ১২ নম্বর সুরা হলো সুরা ইউসুফ। সুরা ইউসুফে ইউসুফ (আ.)–এর কাহিনিকে ১২ ভাগে বিভক্ত করা যায়।

১. হজরত ইউসুফ (আ.) স্বপ্ন দেখলেন।

২. ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করলেন।

৩. মন্ত্রীর স্ত্রী জোলেখা ইউসুফ (আ.)–এর সঙ্গে তাঁর বাসনা পূরণ করতে চাইলেন।

৪. জোলেখার সহচরীরা ইউসুফ (আ.)–এর রূপে বিবশ হয়ে আপেলের বদলে নিজেদের আঙুল কেটে ফেললেন।

৫. ইউসুফ (আ.)–কে জেলে পাঠানো হলো।

৬. মিসরের বাদশাহ রহস্যময় একটি স্বপ্ন দেখলেন।

৭. ইউসুফ (আ.) বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন।

৮. ইউসুফ (আ.)–কে জেল থেকে বের করা হলো।

৯. জোলেখার সহচরীরা নিজেদের দোষ স্বীকার করলেন।

১০. জোলেখা নিজের দোষ স্বীকার করলেন।

১১. ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলেন।

১২. বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যার মর্ম বোঝা গেল।

এখানে আরেকটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়:

১ নম্বরের (ইউসুফ (আ.) স্বপ্ন দেখলেন) সঙ্গে

১২ নম্বরের (বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যার মর্ম বোঝা গেল) মিল পাওয়া যায়।

২ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করলেন) সঙ্গে

১১ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–এর ভাইয়েরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলেন) মিল পাওয়া যায়।

৩ নম্বরের (মন্ত্রীর স্ত্রী জোলেখা ইউসুফ (আ.)–এর সঙ্গে তাঁর বাসনা পূরণ করতে চাইলেন) সঙ্গে

১০ নম্বরের (জোলেখা নিজের দোষ স্বীকার করলেন) মিল পাওয়া যায়।

৪ নম্বরের (জোলেখার সহচরীরা ইউসুফ (আ.)–এর রূপে বিবশ হয়ে আপেলের বদলে নিজেদের আঙুল কেটে ফেললেন) সঙ্গে

৯ নম্বরের (জোলেখার সহচরীরা নিজেদের দোষ স্বীকার করলেন) মিল পাওয়া যায়।

৫ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–কে জেলে পাঠানো হলো) সঙ্গে

৮ নম্বরের (ইউসুফ (আ.)–কে জেল থেকে বের করা হলো) মিল পাওয়া যায়।

৬ নম্বরের (মিসরের বাদশাহ রহস্যময় একটি স্বপ্ন দেখলেন) সঙ্গে মিল পাওয়া যায়

৭ নম্বরের (ইউসুফ (আ.) বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিলেন)।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net