শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী ইন্তেকাল

by ঢাকাবার্তা
মীর শওকত আলী বীর উত্তম

হামীম কেফায়েত ।। 

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ৫ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অন্যতম সহচর লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী বীর উত্তম আর নেই। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে নিজবাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহ…)।

সাবেক মন্ত্রী মীর শওকতের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। পরিবারের সবাই যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
মীর শওকতের পরিবারের এক সদস্য জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসায় চেয়ারে বসে কথা বলা অবস্থায়ই হঠাৎ পড়ে যান মীর শওকত আলী। এরপর ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করে বলেন, হার্ট ফেইলিউরে মারা গেছেন তিনি। মীর শওকত ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারে প্রথমে শ্রম এবং পরে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

মীর শওকতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, সেনাবাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিকসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা ছুটে যান গুলশানের বাসায়। বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া খবর শোনার পরপরই ছুটে যান মরহুমের বাসায়। তিনি তার লাশের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, সহসভাপতি ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া তার মৃত্যুর খবরে সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, উইং কমান্ডার (অব.) এম হামিদুল্লাহ খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত হন।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা ও মীর শওকত আলী। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা ও মীর শওকত আলী। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি।

মীর শওকতের খালাত বোন সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম জানান, বেডরুমে চেয়ারে বসা ছিলেন ভাই। সেখানেই হঠাত্ চুপ হয়ে যান। গতকালই তিনি সিএমএইচে রক্ত পরীক্ষা করেছেন। আজ-কালের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। তিনি জানান, তার স্ত্রী ও মেয়েরা আজ বিকালেই দেশে ফিরবেন। এরপর তাকে দাফন করা হবে। গতরাতে গোসল শেষে সিএমএইচের হিমঘরে সামরিক মর্যাদায় তার লাশ রাখা হয়।

জানাজা : ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাংবাদিকদের জানান, সোমবার মীর শওকতের প্রথম জানাজা হবে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এরপর সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়, বাদ জোহর সেনানিবাসে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। জানা গেছে, মরহুমের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সেনা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। মঙ্গলবার বাদ আছর গুলশান আজাদ মসজিদে তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

জীবনী : মীর শওকতের জন্ম ১৯৩৮ সালে পুরনো ঢাকার নাজিরাবাজারের আগাসাদেক সড়কে। মাহুতটুলী প্রি-প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। এরপর এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ৫নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও কয়েকটি সেক্টরে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে দুর্জয় ভূমিকা পালনের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব দেয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড গঠন করে এর ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে চিফ অব জেনারেল স্টাফ, ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের জেনারেল স্টাফ অফিসার, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি লে. জেনারেল হিসেবে অবসর নেন।

অবসরের পরপরই তাকে বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে চাকরি দেয়া হয়। তিনি জার্মানি, ব্রিটেন, মিসর, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল ও সুদানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে মীর শওকত রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে তিনি বিএনপি সরকারে প্রথমে শ্রম এবং পরে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বিএনপির সহসভাপতি ছাড়াও ১৯৮৮ সালে ঢাকা মহানগর বিএনপি সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি দলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে তার। বিএনপির সহসভাপতির পদ ছাড়ার কথা জানিয়ে পদত্যাগপত্রও পাঠিয়েছিলেন তিনি, যদিও খালেদা জিয়া তা গ্রহণ করেননি। ১৯৯১ সালে ঢাকা-৮ আসন (লালবাগ-হাজারীবাগ-কামরাঙ্গীরচর) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৯ (ধানমন্ডি) থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব রেখে চললেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কয়েক বছর আগে গড়ে ওঠা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন মীর শওকত।

১৯৮১ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসরে যান মীর শওকত। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে কর্মজীবনেও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে তিনি স্ত্রী, তিন মেয়ে রেখে গেছেন। একমাত্র ছেলে কয়েক মাস আগে লন্ডনে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় গুলশান-২-এর ১১৩ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাড়ি মার্শাল হাউজে তার নিকটতম কেউ ছিলেন না।

মীর শওকতের স্ত্রী তাহমিনা শওকত, বড় মেয়ে সিনথিয়া, মেজো মেয়ে সোনিয়া এবং ছোট মেয়ে তানিয়া লন্ডনপ্রবাসী।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net