খেলা ডেস্ক।।
অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২৩ সালটি শেষ হলো বাংলাদেশের বছরটি। চলতি বছর দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ ভালো সময় কাটলেও এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো আসর কেটেছে ব্যর্থতায়। তবে নতুন বছর শুরুর আগে আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই বৃত্ত পূরণ করেছে লাল-সবুজ দল। একবছর আগে সেখানে টেস্ট জেতা বাংলাদেশ এবার একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জিতেছে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি জয়ের পর সুযোগ ছিল কিউইদের মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনও সিরিজ জয়ের। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির বাগড়া এবং শেষ ম্যাচে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেটি হয়নি। ফলে বছরের শেষ দিনটিতে হার এড়ানোর রেকর্ড ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বছরের শেষ দিন এখন অব্দি কোনও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ৩১ ডিসেম্বর তিনটি ওয়ানডে খেলে সবগুলোই হেরেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তিন ম্যাচের মধ্যে ২০০৭ ও ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ১৯৯০ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছিল। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট শেষ হয় বছরের শেষ দিনে এসে। ওই ম্যাচটি বাংলাদেশ হারে ১০৭ রানের ব্যবধানে। এর আগে বছরের শেষ দিন টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলে এবারই প্রথম কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে খেলেছে। কিন্তু আগের চার ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশ বছরের শেষ দিনে এসে হার এড়াতে পারেনি।
তবে বছরের শেষ দিনে হারলেও নিউজিল্যান্ডে এই সিরিজ প্রাপ্তিতে ভরা। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্ট জিতে নিউজিল্যান্ড থেকে প্রথম সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরেছিল। অথচ আগের প্রতিটি সফরে মাথা নিচু করেই তাদের দেশে ফিরতে হয়েছে। এবার কিউইদের মাটিতে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে যায় বাংলাদেশ। আগের সব ওয়ানডেতে হারা বাংলাদেশ এবার শেষ ওয়ানডেতে এসে জয়ের দেখা পেয়ে খরা কাটিয়েছে। নেপিয়ারে জয়ের সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে একই ভেন্যুতে টি-টোয়েন্টির শুরুর ম্যাচে বাজিমাত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে তাদের মটিতে টি-টোয়েন্টিতে হারানোর ইতিহাস গড়েছে। প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল সিরিজটি নিজেদের করে নেওয়ার। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ১১ ওভার শেষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তারপরও শেষ ম্যাচে সুযোগ ছিল সিরিজ জেতার। রবিবার একই ভেন্যুতে বাংলাদেশ তৃতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছিল। এই ম্যাচেও ছিল বৃষ্টির প্রভাব। সেটি ছাপিয়ে ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে ম্যাচটি হারতে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।
শুরুতে টস জিতে আজ ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। ইনিংসের তৃতীয় বলে টিম সাউদিকে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে চার মেরে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু পরের বলেই তাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাউদি। শুধু সৌম্যই নন, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল পুরো ২০ ওভার ব্যাটিংও করতে পারেননি। ১৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছে ১১০। একশো রানও পেরুতে পারতো না। নবম উইকেটে তানভীর ইসলাম-রিশাদ হোসেনের ১৪ বলে ১৮ রানের জুটিতে স্কোর কোনও মতে ১০০ পেরিয়েছে। অধিনায়ক শান্তর ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ১৭ রান।
মামুলি সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে নিউজিল্যান্ডও চাপে পড়ে যায় শুরুতে। এই অল্প রানের পুঁজিতে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দাপট দেখাচ্ছিল বাংলাদেশই। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে টিম সেইফার্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শেখ মেহেদী হাসান। দুর্দান্ত সেই স্টাম্পিং করেন আজ উইকেটরক্ষকের দায়িত্বে থাকা রনি তালুকদার। সেইফার্টের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামেন ড্যারিল মিচেল। সেই মিচেলকে এবারও নিজের শিকার বানান মেহেদী। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে মেহেদীকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন মিচেল।
এক সময় ৪৯ রানে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। কিন্তু জেমস নিশান ও মিচেল স্যান্টনার মিলে ৪৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। নিউজিল্যান্ডের স্কোর ১৪.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৯৫ রান হওয়ার পরই বাগড়া দেয় বেরসিক বৃষ্টি। তখনই বৃষ্টি আইনে নিউজিল্যান্ড ১৭ রানে এগিয়ে ছিল। এরপর আর খেলা না হওয়ায় জিতে যায় কিউইরা। তাতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়।
আরও পড়ুন: শেষ টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ভালো সুযোগ দেখছেন হৃদয়