মোত্তাকিন মুন।।
আবারও শেষ হতে চলল আরো একটি বছর। বছরটি ২০২৩। ২০২৩ এর শেষ হতে আর মাত্র বাকি ৪ দিন। ২০২০ এ বিশ্বে শুরু হওয়া অস্ত্রবিহীন যুদ্ধ করোনা ২০২২ দিকে এসে কমলেও, ২০২৩ এ এসে লাগা একাধিক অস্ত্র যুদ্ধের আগনে পুড়ছে পৃথিবী। যে আগুন ২০২৩ শেষ হতে চললওে নিভেনি। সালতামামিতে আমরা সেগুলোই দেখবো।
করোনার অস্ত্রবিহীন যুদ্ধের রেষ কমেছে কিন্তু এই আগুনের রেষ ক্রমে বাড়ছে। ২০২৩ সালে সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের লোভ ও লালসা। চলতি বছর যেমন প্রকৃতির রোষের মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বকে, তেমনই ক্ষমতা ও দম্ভের মোহে মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে মানুষ ও রাষ্ট্র। এভাবে এই বছর বারবার বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প৷
ইসরায়েল-হামাস সংঘাত
৭ অক্টোবর। ইসরায়েলের বুকে বেনজির হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এই হামলায় প্রাণ হারান ইসরায়েলের অন্তত দেড় হাজার মানুষ। ২৫০ জনকে অপহরণ করে গাজা ভূখণ্ডে নিয়ে যায় হামাস।
তারপরই অপারেশন ‘আয়রন সোর্ড’ শুরু করে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস বা ইসরায়েলের সেনা। বোমার আঘাতে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহত শতাধিক ইসরায়েলি সেনাও। বেনজির মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজা ভূখণ্ড। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে তুমুল সমালোচনার মুখেও সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। বাঁধ ভাঙা জলের মতো ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার সেনারা। ওঠে হাহাকার ও গেল গেল রব। তবে বুকে বল নিয় যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়ান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আমেরিকা ও ন্যাটো দেশগুলোর মদতে পালটা মার দিতে শুরু করে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে থাকা দেশটি। সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুবছর হতে চললেও এখনও চলছে লড়াই। এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি নয় কোনও পক্ষ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাফ বলে দিয়েছেন, উদ্দেশ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাসার আল আসাদ এর জয়ের তীরে
দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার। ‘আরব বসন্তের’ প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পদত্যাগের দাবি জানায় গণতন্ত্রপন্থীরা। সুন্নিপ্রধান সিরিয়ায় শিয়া মতাবলম্বী প্রেসিডেন্টকে সরাতে গিয়ে আন্দোলনকারীরা ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আরব লিগ থেকে সিরিয়াকে বহিষ্কার করা হয়। এ বছর অবশ্য আরব লিগের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সিরিয়াকে। যা আসাদ সরকারের জন্য একটি বড় জয় বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কিছুতেই সংঘাত থামছে না। দেশটিতে গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রায় ১ যুগ ধরে চলা এই সংঘাতেরও কোনো রাজনৈতিক সমাধান মেলেনি আজও। ইরান এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাশার আল আসাদ সরকারকে।
গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সুদান
ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সুদান। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসেনা বাহিনী। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীরই দুই জেনারেল- আবদেল আল ফতে আল বুরহান ও জেনারেল মহম্মদ হামদান দাগালো একে অপরের রক্তপিপাসু হয়ে উঠেছে। প্রথম জন সুদানের সেনাপ্রধান এবং ২০১৯ থেকে দেশের সর্বোচ্চ শাসনব্যবস্থার জন্য ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলের প্রধান। দ্বিতীয় জন দেশের আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ (আরএসএফ)-এর প্রধান তথা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য। দুজন জেনারেলের বিরুদ্ধেই মানবাধিকার ভঙ্গ, লুটতরাজ, নৃশংসতার অভিযোগ রয়েছে। তাদের দুই গ্রুপের লড়াই এখনও চলছে। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ০৩ হাজার মানুষ।
নাইজার অভ্যুত্থান ও ফ্রান্সের ধরাশায়ী
২৬ জুলাই ২০২৩। আফ্রিকার ছোট দেশ কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারে পরিপূর্ণ নাইজারে কিছু বিদ্রোহী সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং গৃহবন্দী রাখে ফ্রান্সের দোসর ও নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমকে । এর একদিন পরে বিদ্রোহী সেনাদের সমর্থন জানায় সেই দেশের বাকি সেনারাও। ফলে প্রেসিডেন্ট বাজুমসহ ফ্রান্সও বিপদে পড়ে যায়।
কেননা বিদ্রোহী সেনারা ক্ষমতা দখলের পরেই ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও ফ্রান্সের সেনাদেরকে সেই দেশে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। মূলত নাইজার ছিলো ফ্রান্সের আধা উপনিবেশিক কলোনী। ফ্রান্স নাইজারের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ খুবই কম মূল্যে, প্রেসিডেন্ট বাজুমের সহযোগীতায় ফ্রান্সে পাচার করতো। তাই নাইজার সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট বাজুমের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও অভ্যুত্থান বলে ঘোষনা করে। এমনকি নাইজারের রাজধানী নিয়ামিতে অবস্থিত ফ্রান্সের একটি সামরিক ঘাঁটির সামনে জড়ো হন লাখ লাখ জান্তা সমর্থক। রাষ্ট্রদূত এবং ফরাসি সেনাদের অবলিম্বে নাইজার ছাড়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভও করেন তারা।
ফ্রান্স এরপর জনতা ও সরকারের কোনো সমর্থন না পেয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দেয় নাইজার থেকে রাষ্ট্রদূত ও নিজেদের সকল সেনা অক্টোবরের মধ্যে প্রত্যাহার করবে। কথা অনুযায়ী কাজও করে ফ্রান্স। কিন্তু অক্টোবরের শেষে যুক্তরাষ্ট্র জানায় নাইজারে তাদের প্রায় ১ হাজার সামরিক কর্মী বহাল রাখছে ওয়াশিংটন। এবং দাবী করেছে দেশটির সেনাবাহিনীকে আর সক্রিয়ভাবে প্রশিক্ষণ বা সহযোগিতা করবে না যুক্তরাষ্ট্র।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। ৭.৮ রিখটার স্কেলে কম্পনের জেরে তাসের ঘরের মতো ভেঙে বাড়িঘর। প্রাণ হারান প্ররায় ৬০ হাজার মানুষ। এহেন বিপর্যয়ের পর সমালোচনার মুখে পড়েন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এর্দোগান। তাঁর আমলেই লাফিয়ে বেড়েছে বেআইনি দালান নির্মাণের সংখ্যা এমন অভিযোগও উঠেছিলো। সেই কারণেই এত প্রাণহানি।
এবছরই সেপ্টেম্বরে মাটির নিচে প্লেটের মরক্কোয় জেগে উঠে আরেকটি ভূমিকম্প । প্রাণ হারান মরক্কোর অন্তত ৩ হাজার মানুষ।
অপারেশন কাবেরী
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে (Sudan) আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে এপ্রিল এর ২৭ তারিখ শুরু হয় ‘অপারেশন কাবেরী’। প্রায় ৪ হাজার ভারতীয়কে যুদ্ধজর্জর দেশটি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আচমকাই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় আফ্রিকা মহাদেশের সুদানে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে বহু ভারতীয় আটকে পড়েন। তাঁদের দেশে ফেরানোর জন্য সৌদি আরব, ব্রিটেনের মতো একাধিক দেশের সঙ্গে কথা বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘেরমহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের (Antonio Guterres) সঙ্গে বৈঠকও করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। এবং শেষমেষ এই উদ্ধার অভিযানে সফলও হন জয়শঙ্কর। ২০২৩ সালে ভারতের বেশকিছু কূটনৈতিক বিজয়ের মধ্যে এটি অন্যতম।
ব্রিটেন দেখলো নতুন রাজা, তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক
২০২২ সালের ০৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। তাঁর মৃত্যুর পরেই উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা হন তৃতীয় চার্লস। তবে রাজপাট দখলের আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি ছিল। অবশেষে প্রায় আট মাস পরে ৬ মে ব্রিটেন ও ১৪টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রাজা হিসাবে অভিষেক হয় তৃতীয় চার্লসের। ৭৪ বছর বয়সি তৃতীয় চার্লসই ব্রিটেনের রাজপরিবারের ইতিহাসে প্রবীণতম হিসাবে অভিষিক্ত হন।
ইয়েমেন-সৌদি গৃহযুদ্ধ
আরব বসন্তের’ প্রভাবে ইয়েমেনের দীর্ঘ সময়ের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহর পতন হয় ২০১১ সালে। কিন্তু তাতেও ইয়েমেনবাসীর ভাগ্যে সুফল মেলেনি।
২০১৪ সালে এডেন উপসাগরের তীরবর্তী এ দেশে গণঅভ্যুত্থানের ‘ছাইভস্ম’ থেকে জন্ম নেয় হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের সব রকমের সাহায্য দিয়ে পেলেপুষে বড় করে ইরান। এতে ইরান-সৌদি সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে। হুতি ও ইরান যেহেতু শিয়া মতাবলম্বী, সৌদি তাই প্রতিবেশী আরব সুন্নি দেশগুলোকে নিয়ে হুতিবিরোধী সামরিক জোট গড়ে তোলে।
এরপর থেকে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট প্রায়ই হামলা চালাতে শুরু করে। প্রতিশোধ নিতে হুতিরাও পাল্টা আক্রমণ চালায় সৌদিতে। জাতিংঘের মধ্যস্থতায় শান্তি প্রস্তাব গৃহীত হলেও তা নড়বড়ে। নতুন করে যেকোনো সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তাতে ইন্ধন দিতে পারে শান্তির খোলসের নিচে চলমান ছোট ছোট হামলা–পাল্টা হামলা।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের যুগপূর্তি: দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার। ‘আরব বসন্তের’ প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পদত্যাগের দাবি জানায় গণতন্ত্রপন্থীরা। সুন্নিপ্রধান সিরিয়ায় শিয়া মতাবলম্বী প্রেসিডেন্টকে সরাতে গিয়ে আন্দোলনকারীরা ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
এর প্রেক্ষিতে আরব লিগ থেকে সিরিয়াকে বহিষ্কার করা হয়। এ বছর অবশ্য আরব লিগের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সিরিয়াকে। কিন্তু কোনো কিছুতেই সংঘাত থামছে না। দেশটিতে গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
প্রায় ১ যুগ ধরে চলা এই সংঘাতেরও কোনো রাজনৈতিক সমাধান মেলেনি আজও। ইরান এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাশার আল আসাদ সরকারকে।
টাইটান দুর্ঘটনা
পাঁচ পাঁচজন অন্যতম ধনী অভিযাত্রীকে নিয়ে ১১১ বছর আগে ডুবে যাওয়া বিলাশবহুল জাহাজ ‘RMS টাইটানিক’-র ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছিলেন ডুবযান টাইটেন। কিন্তু সমুদ্রের গভীরে ‘সর্বনাশা বিস্ফোরণ’-ই কাল হল। চিরতরে সাগরের অতলে হারিয়ে গেল ডুবোজাহাজ ‘টাইটান’।
মার্কিন বেসরকারি সংস্থা ‘ওশেনগেট এক্সপিডিশন’-র পর্যটন সাবমেরিন ছিল ‘টাইটান’। চার চারদিন নিখোঁজ থাকার পর ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করে আমেরিকান কোস্ট গার্ডের রোবট ডুবুরি। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর ‘টাইটান’-র কোনও অভিযাত্রীই বেঁচে নেই বলে জানায় ওয়াশিংটনের সংস্থা ‘ওশেনগেট’।
ভারতের চন্দ্রযানের সফল অবতরণ
দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদ নিয়ে গবেষণা হলেও, তার দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে পারেনি। ইতিহাসে প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের কঠিনতম অঞ্চল দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে গিয়েছে ভারত। সফলভাবে চাঁদের মাটিতে কাজ করেছে ইসরোর তৈরি ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিতেও পড়েছে তেরঙ্গার ছাপ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাঁদ থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে ভারতের চন্দ্রযান। এই অভিযানের ফলে মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা হয়েছে ভারতের নাম।
ভারতে প্রথমবার জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন
২০২৩ সালে প্রথমবার ভারতে বসেছিলো জি ২০ সম্মেলনের আসর। দিল্লিতে এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তাবড় রাষ্ট্রনেতারা। একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে মহাগুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্র। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার, অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে সেদেশের ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালানো- একাধিক বিষয়ের নিন্দা করা হয়েছে।
তবে রাশিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি এই ঘোষণাপত্রে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এই ঘোষণাপত্রকে ভারতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলেই মনে করা হয়েছে।
দাবদাহের রেকর্ড
বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রতি বছর ‘অভূতপূর্ব’ হারে বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। বিদায়ী ২০২৩ সালে দাবদাহ নানা দেশে মানুষসহ সকল প্রাণীকূলকে ভুগিয়েছে। দাবদাহের সময় দাবানলে প্রাণহানী ও বাস্তুচ্যুতিরও ঘটনা ঘটেছে।
২০২৩ এর জুলাই মাসজুড়ে বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে থাকে। এতে ভেঙে যায় তাপমাত্রাবিষয়ক বিভিন্ন রেকর্ড। দেশে দেশে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অস্বস্তিতে পড়ে কোটি কোটি মানুষ। দেখা দেয় দাবানল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক ইভেন্ট এল নিনোর কারণে এমনটা হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
১৭ জুলাই পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বে সর্বোচ্চ রেকর্ড তাপমাত্রা হয় ৫৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে ১৯১৩ সালে রেকর্ড করা হয়। আফ্রিকায় সর্বাধিক রেকর্ড করা তাপমাত্রা হলো ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৩১ সালে তিউনিসিয়ার কেবিলিতে রেকর্ড করা হয়েছিল। ইতিহাসে এশিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০১৭ সালে ইরানে রেকর্ড করা হয়।
২০২১ সালে ইতালির সিসিলিতে ইউরোপের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ২০২৩ সালে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড দেখে চীনবাসী। বছরের শুরুর দিকে তীব্র ঠান্ডায় কাঁপছিল দেশটির কিছু এলাকা। একপর্যায়ে হিমাঙ্কের নিচে (মাইনাস) ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড দেখে চীন। শেষ পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যায় রেকর্ড ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আরও পড়ুন: ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, মিলিশিয়া বাহিনীর কয়েকজন নিহতের দাবি