সাহিত্য ডেস্ক।।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও শরণার্থীসংকট দাগ কেটেছিল আইরিশ লেখক পল লিঞ্চের মনে। তখন তিনি নিজের পঞ্চম উপন্যাস লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভাবলেন, এবার নিজের লেখায় তুলে ধরবেন একনায়কতন্ত্র, গৃহযুদ্ধ আর মানুষের দুর্দশার কথা। এরপরই বাস্তবতার ছায়ায়, কল্পনার মিশেলে লিখে ফেললেন ‘প্রফেট সং’। উপন্যাসটি এ বছর সাহিত্যে সম্মানজনক বুকার পুরস্কার পেয়েছে।
পল লিঞ্চ অবশ্য তাঁর উপন্যাসে সিরিয়া প্রসঙ্গ টানেননি। দেশটির গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে। ‘প্রফেট সং’–এ লিঞ্চ চিত্রায়িত করেছেন অদূর ভবিষ্যতের এক আয়ারল্যান্ড, যেখানে থাকবে না গণতন্ত্র। পড়বে একনায়কতন্ত্রের সর্বগ্রাসী থাবা। এর পরিণতি গড়াবে গৃহযুদ্ধে। ফলে পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালানো শুরু করবে সাধারণ মানুষ।
৪৬ বছর বয়সী পল লিঞ্চের জন্ম আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক শহরে। এখন বসবাস করেন রাজধানী ডাবলিনে। গতকাল রোববার লন্ডনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি। বুকার জয়ের পর তিনি বলেন, উপন্যাসটি লেখা অতটাও সহজ ছিল না। পুরস্কারটি আবার আয়ারল্যান্ডে ফিরিয়ে নিতে পারাটা তাঁর জন্য খুবই আনন্দের বিষয়।
এবার বুকার পুরস্কারের বিচারক দলের প্রধান ছিলেন কানাডার সাহিত্যিক এসি এদুগিয়ান। ছয়জন সাহিত্যিকের তালিকা থেকে লিঞ্চকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। পুরস্কার ঘোষণার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এদুগিয়ান বলেন, ‘হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধসহ সমসাময়িক অনেক সংকটের সঙ্গে মিলে যায় “প্রফেট সং” উপন্যাসটি। তবে শুধু সাহিত্যিক গুণাবলির কারণেই সেটি পুরস্কার পেয়েছে।’
প্রফেট সংয়ের বিষয়বস্তু রাজনীতি আর সেই রাজনীতির জেরে হয় সহিংসতা–হানাহানি। এমন সময় উপন্যাসটি বুকার পুরস্কার পেল, যখন কদিন আগেই ডাবলিনে সহিংসতায় জড়ান আয়ারল্যান্ডের কট্টর ডানপন্থীরা। এ ঘটনা অবাক করেছে লিঞ্চকেও। তাঁর ভাষায়, ‘ওই সহিংসতাকে আমরা (ভবিষ্যতের জন্য) এক সতর্কতা হিসেবে দেখতে পারি।’
তবে লিঞ্চ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ‘রাজনৈতিক লেখক’ নন। ১৮ মাস আগেই ‘প্রফেট সং’ লেখার কাজ শেষ করেছেন তিনি। উপন্যাসটি লিখতে তাঁর সময় লেগেছে পুরো চার বছর। বইটি তিনি লেখা শুরু করেন তাঁর ছেলের জন্মের কিছুদিন আগে। আর যখন লেখার কাজ শেষ হয়েছিল, তখন ছেলে সাইকেল চালাতে শিখে গেছে।
পল লিঞ্চ একসময় পরিচিত ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে। সাহিত্যের জগতে তিনি পা রাখেন ২০১৩ সালে। সে বছর তাঁর ‘রেড স্কাই ইন মর্নিং’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি একজন আইরিশ ব্যক্তিকে ঘিরে। নিজ দেশে একজনকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান তিনি। লিঞ্চের অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘বিয়ন্ড দ্য সি’, ‘গ্রেস’ ও ‘দ্য ব্ল্যাক স্নো’।
বুকার পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৫০ হাজার পাউন্ড, বাংলাদেশের হিসাবে যা প্রায় ৭০ লাখ টাকা। ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। বুকারজয়ের শর্ত হলো, উপন্যাসটি ইংরেজিতে লেখা হতে হবে এবং যুক্তরাজ্যে বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত হতে হবে।
গত বছর ‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’ উপন্যাসের জন্য পুরস্কারটি পান শ্রীলঙ্কার সাহিত্যিক শেহান করুণাতিলকা। হিলারি মান্টেল, সালমান রুশদি, অরুন্ধতি রায় ও মার্গারেট অ্যাটউডের মতো খ্যাতনামা সাহিত্যিকেরাও এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।