রাজনীতি ডেস্ক।।
আপাতত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতেই থাকছে বিএনপি। তবে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের কথাও ভাবছে দলটি। এ ছাড়া ‘ন্যায়বিচার’বঞ্চিত হয়ে দণ্ডিত ও কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণমূলক একটি কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। খুব শিগগির ঢাকায় এই কর্মসূচি হতে পারে।
বিএনপি ও সমমনা জোটের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা জানান, টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনতে এ ধরনের কর্মসূচির কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে বিএনপির দৃষ্টি দলীয় ঐক্য ও সংহতি অটুট রাখা, একই সঙ্গে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি কীভাবে আরও জোরদার করা যায়, সে দিকেও তাদের মনোযোগ রয়েছে।
নেতারা মনে করছেন, সরকার হয়তো জোরজবরদস্তি ‘একতরফা’ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এরপর ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সামনে রেখে নতুন কর্মসূচি নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের প্রথম ভাগে টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি না–ও থাকতে পারে। এ সময়ে আবার বিক্ষোভ-সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর কারও কারও কাছ থেকে। এরপর ৭ জানুয়ারি ঘিরে বড় কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে প্রায় এক মাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে বিএনপির অধিকাংশ কার্যালয় বন্ধ। বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা আত্মগোপনে। এ অবস্থায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনটি পার করতে চাইছেন নেতারা।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার নতুন দুটি দল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে (বিএনএম) দিয়ে বিএনপির নেতাদের চাপ, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দিয়ে নির্বাচনে আনার যে পরিকল্পনা করেছিল, তাতে এখন পর্যন্ত বলার মতো সাফল্য পায়নি। যাঁরা নতুন দল দুটিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা অনুল্লেখযোগ্য। এ অবস্থায় সরকারি মহল বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অথবা তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমে যোগদানের চেষ্টা করতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না।
অবশ্য গতকাল শনিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কোনো নীতিমান, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে করে অর্থ এবং এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংস পার্টি-ভুঁইফোড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢোকানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এসব রাজনৈতিক ব্যক্তির কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০ নভেম্বরের পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলার চিন্তা রয়েছে। তখন বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি দিলে পুলিশের পক্ষ থেকে কী ধরনের বাধা আসে, সেটিও দেখতে চান নেতারা।
আরও পড়ুন: বিএনএমের মহাসচিবের অনুরোধ, ‘কিংস পার্টি’ বলবেন না