শনিবার, আগস্ট ৯, ২০২৫

বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ও সরকারের প্রতিবাদ

“দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন একপাক্ষিক, সরলীকৃত এবং বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সমগ্র জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।”

by ঢাকাবার্তা
নিবন্ধের স্ক্রিনশট

সৈয়দ হাসসান ।।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর রাজনৈতিক শূন্যতার ফলে বাংলাদেশে ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের উত্থান ঘটছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এক শহরে মেয়েদের ফুটবল খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং অন্য শহরে একজন নারীকে উত্যক্তকারীকে পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাগুলো চরমপন্থীদের বাড়তি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

মুজিব মাশাল ও সাইফ হাসনাতের নামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গণতন্ত্র পুনর্গঠনের চেষ্টার মধ্যে ইসলামী চরমপন্থার দীর্ঘদিনের লুকিয়ে থাকা প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় খিলাফতের দাবিতে মিছিল, ইসলাম অবমাননাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হুমকি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিক্ষোভও প্রতিবেদনে গুরুত্ব পেয়েছে।

এই প্রতিবেদনের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন একপাক্ষিক, সরলীকৃত এবং বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সমগ্র জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।”

তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদকে আলাদা করা জরুরি। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতিকে উপেক্ষা করে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ভুল ধারণা তৈরি করা হয়েছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিশেষভাবে নারীদের অগ্রগতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকা গভীরভাবে প্রোথিত, ৩৭ শতাংশ নারী আনুষ্ঠানিক শ্রমশক্তিতে যুক্ত। তাই তাদের জোর করে ঘরে পাঠানোর যেকোনো প্রচেষ্টা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক ‘যুব উৎসব ২০২৫’-এ দেশের ২৭ লাখ মেয়ে অংশ নিয়েছে এবং ৩,০০০টি খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে। একটি ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি করা হলেও, বাকি ২,৯৯৯টি সফল আয়োজনের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকছে।

প্রতিবেদনে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের বিষয়ে সমালোচনা করে বলা হয়েছে, তিনি চরমপন্থীদের মোকাবিলায় নরম মনোভাবাপন্ন এবং সংঘাত এড়াতে অতিরিক্ত মনোযোগী। তবে সরকার একে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছে, ইউনূস সবসময় নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে ছিলেন এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কাজ করেছেন, যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে।

সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ধর্মীয় সহিংসতা হিসেবে চিত্রিত করা বিভ্রান্তিকর। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা মূলত রাজনৈতিক এবং একে ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে বর্ণনা করা সত্যকে আড়াল করে।

প্রেস সচিব বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা ভুল তথ্য দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত নয়।”

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি সামনে আনা হলেও, অন্তর্বর্তী সরকার একে সরলীকৃত ও একপাক্ষিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার বলছে, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রসর হচ্ছে এবং দেশের সামাজিক পরিবর্তনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net