বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

দুর-এ-ফিশান সেলিম: দক্ষিণ এশিয়াকে মুগ্ধ করে রাখা এক উদীয়মান তারকা

by ঢাকাবার্তা
দুর-এ-ফিশান সেলিম

মানাম মায়মূন ।। 

দুর-এ-ফিশান সেলিম, পাকিস্তানের টেলিভিশন জগতের এক ঝলমলে নাম, যিনি তার অভিনয় দক্ষতা, স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং পর্দায় মুগ্ধকর উপস্থিতি দিয়ে কোটি দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন। শুধু পাকিস্তানেই নয়, বাংলাদেশ ও ভারতেও তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তার অভিনীত নাটকগুলো সীমানা পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দর্শকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে, যা তাকে আঞ্চলিক বিনোদন জগতের একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আইনের ছাত্রী থেকে টেলিভিশনের প্রিয়মুখ— দুর-এ-ফিশানের যাত্রা প্রেরণাদায়ী এবং তার প্রতিভার প্রকৃত প্রতিফলন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

১৯৯৬ সালের ১৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন দুর-এ-ফিশান সেলিম। পাঞ্জাবি মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা এই তরুণী চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা সেলিম-উল-হাসান ছিলেন পাকিস্তান টেলিভিশনের একজন খ্যাতনামা পরিচালক ও প্রযোজক, যিনি তার শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পাকিস্তানের টিভি শিল্পে অবদান রেখেছেন। মা শুমাইলা সেলিম একজন গৃহিণী, যিনি পরিবারের জন্য সবসময় একটি শক্ত ভিত্তি হিসেবে ছিলেন।

দুর-এ-ফিশান সেলিম

দুর-এ-ফিশান সেলিম

লাহোরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে দুর-এ-ফিশান লন্ডনের ইউনিভার্সাল কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ২০২০ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। আইনের প্রতি তার আগ্রহ থাকলেও, অভিনয়ের প্রতি গভীর টান তাকে বিনোদন জগতের দিকে নিয়ে আসে। তিনি তার প্রতিভা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে সঠিক দৃঢ়তা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন সম্ভব।

অভিনয়ে পদার্পণ ও উত্থান

২০২০ সালে দুর-এ-ফিশান হাম টিভির নাটক দিল রুবা-য় এরুম চরিত্রে একটি পার্শ্ব ভূমিকার মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। এই ভূমিকায় তার স্বাভাবিক অভিনয় এবং পর্দায় উপস্থিতি দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই নাটকের জন্য তিনি লাক্স স্টাইল অ্যাওয়ার্ডে সেরা নবাগত হিসেবে মনোনয়ন পান, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম স্বীকৃতি ছিল।

একই বছর তিনি ভারাস নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন, যেখানে তার অভিনয় তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এই নাটকের জন্য তিনি এআরওয়াই পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। এরপর কাইসি তেরি খুদগার্জি (২০২২), পরদেস (২০২১), ইশক মুরশিদ (২০২৩), এবং খায়ে (২০২৪)-এর মতো নাটকগুলো তাকে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের একজন করে তুলেছে। ইশক মুরশিদ-এ বিলাল আব্বাস খানের সঙ্গে তার রসায়ন দর্শকদের মন জয় করেছে, এবং এই নাটকটি ইউটিউবে ১ বিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েছে।

২০২১ সালে তিনি টেলিফিল্ম হানগর এস-১৩১-এ একজন সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত। এই ভূমিকায় তার সাহসী ও আবেগপ্রবণ অভিনয় প্রশংসিত হয়। ২০২৫ সালে তিনি সানওয়াল ইয়ার পিয়া নাটকে ফিরোজ খান ও আহমেদ আলি আকবরের সঙ্গে অভিনয় করতে যাচ্ছেন, যা তার ভক্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয়তা

দুর-এ-ফিশানের জনপ্রিয়তা শুধু পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তার নাটকগুলো বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপকভাবে দেখা হয়, বিশেষ করে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স এবং অন্যান্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। ইশক মুরশিদ এবং কাইসি তেরি খুদগার্জি বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়, যেখানে তার সংলাপ এবং ফ্যাশন স্টাইল তরুণদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারতেও তার নাটকগুলো দর্শকদের মন জয় করেছে, বিশেষ করে তার স্বাভাবিক অভিনয় এবং গল্পের গভীরতা দিয়ে। সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের ভক্তরা তার অভিনয়ের প্রশংসা করে পোস্ট শেয়ার করেন, যা তার আঞ্চলিক প্রভাবের প্রমাণ।

তার এই আন্তঃসীমান্ত জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে তার বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষমতা এবং পাকিস্তানি নাটকের গল্প বলার শৈলী, যা দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতি ও আবেগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার অভিনীত নাটকগুলো প্রায়ই প্রেম, ত্যাগ, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সামাজিক ইস্যুগুলো তুলে ধরে, যা বাংলাদেশ ও ভারতের দর্শকদের কাছে সহজেই আবেদন করে।

ফ্যাশন ও মডেলিং

অভিনয়ের পাশাপাশি দুর-এ-ফিশান ফ্যাশন জগতেও নিজের ছাপ রেখেছেন। তিনি Muse Luxe-এর ২০২৩ সালের স্প্রিং-সামার কালেকশনের মডেল হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার ফ্যাশন সেন্স তরুণদের মধ্যে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী পাকিস্তানি পোশাক থেকে আধুনিক পশ্চিমা স্টাইল—তার পোশাকের বৈচিত্র্য তাকে দক্ষিণ এশিয়ার ফ্যাশন আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তার ফ্যাশন স্টাইলের একটি জানালা, যেখানে তিনি প্রায়ই ভ্রমণ, পোশাক এবং জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত শেয়ার করেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি

দুর-এ-ফিশান তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব একটা আলোচনা করেন না, যা তার পরিপক্কতা ও পেশাদারিত্বের প্রমাণ। তিনি অবিবাহিত এবং তার ক্যারিয়ারের ওপর বেশি মনোযোগী। তিনি পড়তে ভালোবাসেন এবং তার বইয়ের সংগ্রহে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রয়েছে। খাবারের প্রতি তার দুর্বলতা রয়েছে, বিশেষ করে পিজা ও প্যানকেক তার প্রিয়। তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা তার শৈল্পিক বহুমুখিতার আরেকটি দিক।

তার ইনস্টাগ্রাম বায়োতে লেখা “Eatprayloveactkindalife” তার জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি জীবনকে ভালোবাসতে হলে সহানুভূতি ও সৃজনশীলতার মিশ্রণ প্রয়োজন।” এই দর্শন তার অভিনয়েও প্রতিফলিত হয়, যেখানে তিনি প্রতিটি চরিত্রে গভীরতা ও সত্যতা আনেন।

দুর-এ-ফিশান সেলিম

দুর-এ-ফিশান সেলিম

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

দুর-এ-ফিশানের ক্যারিয়ার এখনো তরুণ, কিন্তু তিনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার ও মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০২১ সালে ভারাস-এর জন্য তিনি এআরওয়াই পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন এবং দিল রুবা-র জন্য লাক্স স্টাইল অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০২২ সালে কাইসি তেরি খুদগার্জি-র জন্য তিনি সেরা টিভি অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। ২০২০ সালে হ্যালো পাকিস্তানের HOT100 তালিকায় তিনি “ট্রেইলব্লেজার” হিসেবে স্থান পান, যা তার সম্ভাবনার স্বীকৃতি।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

দুর-এ-ফিশান সেলিম এখনো তার ক্যারিয়ারের শুরুতে রয়েছেন, কিন্তু তার প্রতিভা ও জনপ্রিয়তা তাকে দক্ষিণ এশিয়ার বিনোদন জগতে একটি শক্তিশালী নাম করে তুলেছে। তার আসন্ন নাটক সানওয়াল ইয়ার পিয়া দর্শকদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। তিনি চলচ্চিত্রে পা রাখার কথাও ভাবছেন, যা তার ভক্তদের জন্য আরেকটি উত্তেজনার বিষয়। তার বহুমুখী প্রতিভা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা তাকে ভবিষ্যতে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

উপসংহার

দুর-এ-ফিশান সেলিম শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি প্রেরণা। পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ভারতের দর্শকদের হৃদয়ে তিনি বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন তার অভিনয়, ফ্যাশন এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। তার যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বপ্নের পেছনে ছুটলে এবং নিজের প্রতিভার প্রতি বিশ্বাস থাকলে সীমানা কোনো বাধা নয়। দুর-এ-ফিশানের গল্প এখনো অনেক দূর যাওয়ার বাকি, এবং আমরা অপেক্ষায় আছি তার পরবর্তী অধ্যায় দেখার জন্য।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net